চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বন্য হাতির আক্রমণে দুই মাসের শিশু আরমান জাওয়াদের মৃত্যু ঘিরে বিক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা।
শনিবার (২২ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে নিহত শিশুটির লাশ নিয়ে দৌলতপুর স্কুল এলাকার পিএবি সড়ক অবরোধ করে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এতে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (কেইপিজেড) এলাকার শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, বারবার হাতির আক্রমণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
তারা জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত বন বিভাগ, প্রশাসন ও কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ হাতির আক্রমণ প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানের নিশ্চয়তা না দেবে, ততক্ষণ তারা রাস্তা ছাড়বেন না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া মো. ওয়াসিম আকরাম বলেন, আমরা বারবার মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছি, অথচ বন বিভাগ কিংবা প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। একের পর এক প্রাণহানি ঘটলেও তারা নির্বিকার। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি রাস্তায় নামতে। স্থায়ী সমাধান না হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
কর্ণফুলী থানার ওসি (তদন্ত) শাফিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসেনি।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
বিক্ষোভস্থলে সকাল ৮টা ২ মিনিটে জামতলা শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল গফুর এবং ৮টা ২০ মিনিটে কর্ণফুলী থানার ওসি (তদন্ত) শাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী উপস্থিত হলেও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে দেখা যায়নি। কেইপিজেডের এজিএম মুশফিকুর রহিমের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ১টার দিকে উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর জমাদার পাড়া এলাকায় বন্য হাতির হামলায় দুই মাসের শিশু আরমান জাওয়াদ নিহত হয়। এ সময় তার মা খজিমা বেগম (৩০) গুরুতর আহত হন এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শিশুটির বাবা মোহাম্মদ ইব্রাহীম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ঘুমন্ত শিশুকে হাতি মেরে ফেলল, তার মা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমরা আর কত প্রাণ দিলে এই সমস্যা সমাধান হবে?
স্থানীয়রা জানান, হাতির আক্রমণ প্রতিরোধে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানান।
এসআর