ধারের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় পঞ্চম শ্রেনীকে ছাত্রীকে আপন ফুপু বিয়ে দিয়েছেন ৪০ বছরের পাওনাদারের সাথে। এখন দলবল নিয়ে ঔই নাবালিকাকে বারবার তুলে নেয়ার চেষ্টা করছেন ফুপু এবং পাওনাদার। তাদের হুমকি আর বারবার হানা দেয়ার ঘটনায় আতঙ্কে দিন পার করছে শিশুটির পরিবার।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মধ্য টিয়াখালী গ্রামের পিতা নজরুল সিকদার বোন জাহানারা বেগমের মাধ্যমে বালিয়াতলী ইউনিয়নের লেমুপাড়া গ্রামের শিপন হাওলাদারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। বিভিন্ন ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় দেনায় জর্জরিত নজরুল সিকদার ধারের টাকা ৪ মাসেও পরিশোধ করতে পারেননি। বিভিন্ন দেনার দায়ে নিজ বসতবাড়ি বিক্রি করে হয়েছেন দেশান্তরী।
নজরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে এক মাস পূর্বে ফুফু জাহানারা বেগম, আছিয়া ও তার মা খাদিজা বেগমকে তাদের গ্রামের বাড়ি লেমুপাড়াতে বেড়াতে নিয়ে যায়। পরের দিন সন্ধ্যায় আছিয়াকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কলাপাড়া পৌর শহরের একটি বাড়িতে নিয়ে আসেন জাহানারা। সেখানে আছিয়ার মায়ের অজান্তে আছিয়াকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে গোপনে বিয়ে দেন শিপন হাওলাদারের সাথে। বয়স না হওয়ায় কাবিন সম্পন্ন করতে না পেরে কলমা সম্পাদন করে। জোর করে একটি কাগজে আছিয়ার স্বাক্ষর রাখেন তারা। ওইদিন রাতে বাড়িতে নিয়ে গেলে আছিয়ার কান্নাকাটিতে বিষয়টি জানতে পারেন তার মা। পরের দিন আছিয়াকে নিয়ে ফুফুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে চলে আসেন তারা।
আছিয়ার মা খাদিজা বেগম জানায়, ২ মার্চ শিপন হাওলাদার ও আছিয়ার ফুফু জাহানারা দলবলসহ একটি অটোরিকশা নিয়ে আছিয়াকে তুলে নিতে তাদের বাড়িতে আসে। এসময় স্থানীয়রা বাঁধা দিলে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ১৪ মার্চ শিশুটিকে দ্বিতীয় দফায় নিয়ে যেতে তার ফুফু তাদের বাড়িতে আসলে আছিয়া পালিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তিনি আরো জানান, উৎকন্ঠায় দিন পার কারছে তার পরিবার।
আছিয়ার পিতা নজরুল সিকদার বলেন, শিপন হাওলাদারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছি। ধারের টাকা ফেরত দিব। কিন্তু আমা মেয়ের সাথে যা করা হয়েছে তার বিচার চাই। আমার মেয়ে এখন গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে চায়।
আছিয়াদের প্রতিবেশি সত্তরোর্ধ্ব বিবিসন বেগম, রুবেল বলেন, আছিয়াকে জোর করে তুলে নিতে এসেছে তার ফুফুসহ বেশ কয়েকজন। খবর পেয়ে আমরা প্রতিবেশিরা তাদের বাড়ীতে আসি। তখন শুনলাম, কয়েকদিন আগে আছিয়ার বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আছিয়ার পরিবার তা অস্বীকার করছে। ঘটনা শুনে আমরা শিপনকে বলেছি আছিয়ার বয়স ১৮ হলে তখন নিতে আইসেন। কিন্তু সে কোনভাবেই মানেনা, আছিয়াকে নিয়ে যাবেই। এসময় পুলিশ আনার কথা বললে তারা চলে যায়।
আছিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ফুফু আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে কলাপাড়া একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে ওই বুড়া লোকটার সাথে কলমা দেয়, স্বাক্ষর নেয়। এখন বারবার তুলে নিতে আসে। বাড়ীর বাইরে যাইনা ভয়ে। এ বিয়ে মানিনা। আমি লেখাপড়া করতে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আছিয়ার ফুফু জাহানারা বেগম বলেন, টাকা মেরে দেয়ার জন্য আমার ভাই ও ভাবী নতুন নাটক সাজিয়েছে। আছিয়ার সঙ্গে শিপনের বিয়ে হয়নি।
খাদিজা বেগম কয়েকদিন আগে আছিয়াকে নিয়ে জাহানারার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল তখন তিনি তাদের দেখেছেন জানিয়ে শিপন হাওলাদার বলেন, আছিয়ার কোন বিয়ে হয়নি। আছিয়ার বাবা নজরুল সিকদারের কাছে টাকা পাবো। আছিয়ার ফুফু সে টাকা নিয়ে দিছে। টাকা ফেরত চাওয়ায় আমার নামে দুর্নাম ছড়াচ্ছে।
কেন এবং কোন সম্পর্কে কারণে টাকা ধার দিলেন, কত টাকা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি শিপন হাওলাদার।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আছিয়াকে আইনী সুরক্ষা দেয়া হবে।