চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপকূলীয় ইউনিয়ন সরল। এই এলাকার সিংহভাগ মানুষ লবণ চাষের সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লবণ চাষিরা সামিয়াত আমিন জিসান ও সামসিয়াত রিফান নামে দুই সহোদরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এক ভাই ছাত্রদল নেতা। আরেক ভাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। দুই ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এলাকায় নানান অপরাধ সংঘটিত হয়। কিন্তু ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পরও তারা থাকেন বহাল তবিয়তে। রাজনীতিকে অপরাধের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন।
দুই ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী এবার নিরুপায় হয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সুপারের কাছে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেছে। সোমবার (২৪ মার্চ) গ্রামবাসীর পক্ষে গণস্বাক্ষর নিয়ে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী আলী হোসেন। তিনি সরল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খলিলুর রহমানের ছেলে।
অভিযুক্ত দুই ভাই হলেন- বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মৃত আমিনুর রশিদের ছেলে সামিয়াত আমিন জিসান ও সামসিয়াত রিফান। এরমধ্যে সামিয়াত আমিন জিসান চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সামসিয়াত রিফান পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগ নেতা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে রিফান সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এর অনুসারী।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সামসিয়াত আমিন জিসান ও সামসিয়াত রিফান। দুই সহোদরের নেতৃত্বে সরল ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী সক্রিয়। গ্রামের সহজ-সরল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন বেড়িবাঁধের পার্শ্ববর্তী এলাকায় লবণ চাষ ও বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সরল ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় সামিয়াত আমিন জিসান ও রিফানের নেতৃত্বে লবণের মাঠে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। তাদের কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় ২০ থেকে ৩০টি দেশী-বিদেশী বন্দুক দিয়ে সেদিন বিকেলে লবণ চাষিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এ ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন লবণ চাষি গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর আহত লবণ চাষি জয়নাল আবেদীনের বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এলোপাতাড়ি গুলি করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও স্থানীয়-জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাঁশখালী থানায় মামলা হলেও আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেন। দুই সহোদরের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সরল নতুন বাজার সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণ মানববন্ধন করে।
প্রবাসী মনজুর আহমদ বলেন, আমি সম্প্রতি প্রবাস থেকে ছুটি পেয়ে দেশে এসেছি। সামিয়াত আমিন জিসানের নির্দেশে আমাকে একদল সন্ত্রাসী গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে চুনতি বাজার থেকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। সেদিন কোনরকম পালিয়ে এসে বাঁশখালী থানার সেকেন্ড অফিসারকে ঘটনাটি জানিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সামিয়াত আমিন জিসান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উক্ত ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। এর আগে স্থানীয় নুরুল আবছারের ছেলে মো. খালেদকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় নতুন বাজারের স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করেন।
ভুক্তভোগী আলী হোসেন জানান, প্রশাসনের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আমিনুর রশিদের ছেলে সামিয়াত আমিন জিসান দলের প্রভাব খাটিয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লালন করতেছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাঁশখালী থানার পুলিশকে মেরে মামলার আসামিকে পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, রিফান আমাদের মামলার এজাহারভুক্ত ৩নং আসামি। ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নেতা রিফান অদ্ভুতভাবে জামিন নেওয়ার পর এলাকায় প্রকাশ্যে এই বলে হুমকি ধামকি প্রদান করে যে, তাদের কর্মকাণ্ডে বিগত ১৬-১৭ বছর কেউ বাধা দিতে পারেনি। সরকার পরিবর্তন হলেও জিসানের ছত্রছায়ায় তাদের কর্মকাণ্ডে কেউ বাধা দিতে পারবে না। জিসানের হাত নাকি অনেক লম্বা। এখন নিরুপায় তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে এবং তাদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে পুলিশ সুপার মহোদয়কে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রদল নেতা সামসিয়াত আমিন জিসান বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমার রাজনৈতিক ফিউচারকে ধ্বংস করার জন্য একটি পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে। আমার বাবা সরল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আমি কেন চাঁদাবাজি করতে যাবো? আমার কাছে অস্ত্র থাকার বিষয়টি হাস্যকর।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন/এসকে/আরআই