এইমাত্র
  • সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
  • আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধ, বাড়তে পারে লোডশেডিং
  • বেনাপোল কাস্টমসে ৯ মাসে রাজস্ব বেড়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা
  • ফটিকছড়িতে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার
  • তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ডলারের মান
  • মুন্সীগঞ্জে বিদেশী পিস্তল ও ম্যাগাজিনসহ শিক্ষক গ্রেফতার
  • নড়াইলে দেশীয় অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার ১
  • শাহজাদপুরে খাস জমি দখলকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ২০
  • কাউখালীতে ওয়ারেনটভুক্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার ৪
  • পুলিশের চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ লেনদেন, গ্রেফতার ২
  • আজ শনিবার, ২৯ চৈত্র, ১৪৩১ | ১২ এপ্রিল, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    কক্সবাজারে মসজিদের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমি দখলের চেষ্টা

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

    কক্সবাজারে মসজিদের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমি দখলের চেষ্টা

    শাহীন মাহমুদ রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (কক্সবাজার) প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

    কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের হামির পাড়ায় মসজিদের জমি দাবি করে দেয়াল ভেঙে জমি দখলের চেষ্টা চালিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

    অভিযোগ উঠেছে, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে হাতিয়ার করে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র মসজিদের নাম ব্যবহার করে নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িক আবরণে নিজেদের অপকৌশল চালিয়ে তারা জমি দখলের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। দখলচক্রের সদস্যরা দিনদুপুরে একটি নির্দিষ্ট বসতভিটার সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেয়-যার পেছনে ‘ধর্মীয় প্রয়োজনে জায়গা লাগবে’ এমন অজুহাত দাঁড় করানো হয়।

    জমির মালিক নাম শেখ মো. আবু শামা (৬৮)।তিনি শিক্ষাবিদ হিসেবে নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ঈদগাঁও শিক্ষা নিকেতনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তিনি এলাকার শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

    জানা গেছে, আবু শামা দীর্ঘ বছর ধরে হামির পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালের দিকে তার পিতা মোজাফ্ফর আহমদ এবং শ্বশুর আলহাজ্ব ডা. হোসাইন আলী মিলে হামির পাড়া কেন্দ্রিয় জামে মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং পরবর্তীতে তাদের জমিতে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

    আবু শামা জানান, জমিটি তার পৈতৃক সম্পত্তি। ৯ শতক খতিয়ানভুক্ত হয় ১৯২৮ সালে। যার আরএস খতিয়ান ৩১৭। এক সময় সেখানে চায়ের দোকান করতেন তার পরিবার। পরবর্তীতে আবুশমা একটি টমটম গ্যারেজ ও ঘর নির্মাণ করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে সেখানে একটি মকতবও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০০২ সাল পর্যন্ত মসজিদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আবুশমা। পরে স্ট্রোকজনিত অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর স্থানীয় হুমায়ুন কবির, আরমান আলী, মাষ্টার শামসুল আলম ও আবুল হোসেন মিয়া দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালে আবার সভাপতি হিসেবে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তবে পরবর্তীতে নানা জটিলতায় তিনিসহ ও অন্যান্য সদস্যরা পদত্যাগ করেন।

    আবু শামার দাবি, তিনি ও কমিটির অন্যান্য সদস্যরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার পর মাষ্টার শামসুল আলমকে মসজিদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাইলে তিনি ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এরপর দীর্ঘ টালবাহানার পর হিসাব বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও, সেই সময় থেকেই একটি চক্র নানা রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আবু শামার অভিযোগ-স্থানীয় মো. বাবুল ও হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে একটি চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে এবং তার পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা কৌশলে ফাঁদ পেতেছে।

    আবু শামা ও তার পরিবারের দাবি, মসজিদের কিছু জমি কৌশলে নিজেদের দখলে নিতে বাবুল ও হুমায়ুন কবির পরিকল্পিতভাবে খতিয়ানে নিজেদের নামে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন এবং জমিটি দখলে নেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আবু শামা মসজিদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় জমি উদ্ধারের পাশাপাশি কাগজপত্র সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু প্রতিকার চাওয়াটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। তার পর থেকেই আবু শামা ও তার পরিবার একটি প্রভাবশালী চক্রের রোষানলে পড়েন।

    এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৪ মার্চ দুপুর ২টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে একটি দল আবু শামার টমটম গ্যারেজ সংলগ্ন সীমানা দেয়ালে ভাঙচুর চালায়। এতে অংশ নেওয়া অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন-নুরুল ইসলাম (দপ্তরী), নুরুল ইসলাম (লেংগা), মোঃ বাবুল, মোকতার আহমদ (কাদমর পাড়া), নুরুল ইসলাম (পুলাইয়া), জয়নাল আবেদীন, নুরুল হাকিম, হুমায়ুন কবির, কালা মিয়া, বদিউল আলম, বাটি আবছার, মনছুর আলম, নুরুল ইসলাম (নাফাইঙ্গা), আমানো, তোফাইল, আবছার মিয়া, নরুল কবির, মোঃ নবী, আবুল হোসেন মিয়া, ফরিজ আলম, এবাদুল্লাহ, গোরা মিয়া (নোয়াগুর), শামসু আলম, জয়নাল ও বেলাল উদ্দিন।

    এই ঘটনায় আবু শামা বাদি হয়ে গত ২০ মার্চ দ্রুত বিচার আইনে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দখলের মূল টার্গেট একটি পারিবারিক জমি, যার ওপর দীর্ঘদিন ধরে মালিকপক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। আচমকা কিছু ব্যক্তি নিজেদের ‘মসজিদের প্রতিনিধিত্বকারী’ পরিচয় দিয়ে জমিটিতে প্রবেশ করে এবং দেয়াল ভাঙতে শুরু করে। তাদের আচরণ ছিল উগ্র ও ভয়ভীতিপূর্ণ।

    ধর্মীয় আবেগকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করে স্থানীয়রা জানান, ঘটনাটি নিছক জমি বিরোধ নয়, বরং ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে জমি দখলের একটি সুপরিকল্পিত কৌশল। "মসজিদের জন্য জায়গা লাগবে"-এই ছুতোকে সামনে রেখে দখলচক্র এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।

    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের সীমানা প্রাচীরের একটি অংশ ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে। মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে আবু শামার ছেলে রাসেলের টমটম গ্যারেজ ও তার বসতঘর। স্থানীয়রা জানান, মসজিদের আশপাশে আবুল কালাম, আব্দুস সালাম, ফরিদ আহমদ, নুর আহমদ, নুর হুদা, শামশু ও আবুল হোসেন গং দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে কবরস্থান ঘেঁষা জমি দখল করে বসবাস করছেন। তবে এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলেই স্থানীয়দের অভিযোগ। বরং প্রকৃত ভূমির মালিক ও দীর্ঘদিনের কমিটির সদস্যদের হয়রানির চেষ্টা চলছে।

    ভুক্তভোগীরা বলছেন, বারবার অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার মিলছে না। দখলদাররা মসজিদের নাম ভাঙিয়ে যেহেতু ঘটনাটি ঘটাচ্ছে, তাই স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টিকে ‘সংবেদনশীল’ বিবেচনায় এড়িয়ে চলছে।

    স্থানীয় এক যুবক না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মসজিদকে কেন্দ্র করে জমি দখলের চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রকৃত মালিকের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে কিছু ব্যক্তি সুবিধা নিতে চাইছে।”

    তিনি আরও জানান, “মসজিদের নামে জমি দখল করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার প্রবণতা বাড়ছে। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

    একইসঙ্গে এলাকার এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “যেখানে ইবাদতের জায়গা নিয়ে সংঘাত তৈরি হয়, সেখানে শান্তি থাকতেই পারে না। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে বড় ধরণের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।”

    ঘটনার মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত বাবুল দাবি করেছেন, দেয়াল ভাঙচুর তিনি করেননি; বরং এটি করেছেন এলাকার ধর্মীয় অনুভূতিতে উদ্বুদ্ধ স্থানীয় জনতা। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল থেকে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আবেদন জানিয়ে এসেছেন, কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো কার্যকর সমাধান পাওয়া যায়নি।

    বাবুল আরও বলেন, “এত মানুষ এলাকায় থাকলেও একটি পরিবারের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করতে পারছে না-এমন অভিযোগ করেছেন ইউএনও ও এসিল্যান্ড। সেই কারণেই এলাকার ধর্মপ্রাণ জনগণ নিজেরাই দেয়াল ভেঙে জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছেন।” তিনি বর্তমানে নিজেকে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন বলেও দাবি করেন।

    এফএস

    ট্যাগ :

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…