২৬ এপ্রিল ১৯৮৯ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জে সাটুরিয়া উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যায় দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ংকরী এক টর্নেডো। মাত্র ২ মিনিটের সেই ঝড়ে সবকিছু লন্ডভন্ডে করে দিয়ে ধ্বংসস্তপ্তে পরিণত করে হরগজ, সাটুরিয়া বাজার এবং এর আশেপাশের ১২ টি গ্রাম। সেই থেকে ২৬ এপ্রিল'কে সাটুরিয়া ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে এই উপজেলাবাসী।
স্থানীয়দের তথ্য মতে, ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল বিকাল বেলা ঠিক সন্ধ্যা কিছু আগ মুহূর্তে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর টর্ণেডো আঘাত হানে। যার গতি ছিল ১৮০- ৩৫০ কিলোমিটার। যার সময়কাল ছিল মাত্র ২ মিনিটের মত। আর সেই ২ মিনিটে সাটুরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা পরিণত হয়ে যায় এক মৃত্যুপুরীতে। মৃত্যুবরণ করে প্রায় দেড় হাজার মানুষ এবং অঙ্গহানি সহ আহত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।
কথা হয়, সেই সময় নিজ চোখে টর্ণেডো দেখা কয়েক জনের সাথে তাদের মধ্যে একজন বিপ্লব হোসেন মাস্টার। তিনি জানান, সে সময় ছিল রমযান মাস। ইফতারে আগমুহূর্তে বাড়ির সামনে আমিসহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় দেখলাম অনেক মানুষ পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশেটা রক্তের মত লাল বর্ণ ধারণ করে ছিল। যা কখনো দেখা যায় না, এককথায় ভয়ংকর লাল। যেন নতুন কোন বড় সূর্য উঠতেছে। এমনটা দেখতে দেখতেই কিছুক্ষণের মধ্যে পশ্চিম দিকের আকাশে কিছু উঠছে এবং যেন ভয়ংকর এক দানব সব কিছু নিয়ে আমাদের দিকে আসছে। সবাই তাড়াহুড়ো করে যার যার বাড়ির দিকে নিরাপত্তার আশায় ছুটে গেল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। কয়েক মিনিটে আমাদের বাড়ি সহ আশেপাশের সব বাড়ি ঘর আকাশে উঠে গেল। আমার নিজ চোখে দেখলাম আমাদের ঘরটা কাগজের মত আকাশে নিয়ে গেল। গাছের ডালে আমার দাদিকে বসিয়ে রেখেছিল। এলাকার কয়েকটি পানির টিওবয়েল পাইপ সহ নিয়ে গেছিল। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর আকাশে বাতাসে মানুষের কান্নার শব্দ। যা কল্পনা করতে এখনো গা শিউরে ওঠে।
সে সময় এক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘‘ধ্বংসযজ্ঞ এতই নিঁখুত যে, সেখানে কিছু গাছের কঙ্কাল ছাড়া দৃশ্যত দাঁড়ানো আর কোনো বস্তু নেই ৷ সেই সময়ের ঘটনায় আরও শুনা যায়, এই ঝড়ে চাল ভর্তি ট্রাক নদীর ওপারে হাসপাতাল গেটে গিয়ে পড়ে ছিলো।
১৯৮৯ সালের এই ভয়াবহ টর্নেডো রেকর্ড ভাঙা আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট ঘটনা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে জাতিসংঘের আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা (ডব্লিউএমও)। অল্প সময়ের মধ্যে টর্নেডোতে এত ভয়াবহ ধ্বংসলীলার কারণে ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সাটুরিয়ার টর্নেডোকেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
২৬ এপ্রিলের টর্নেডোতে প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুরোপুরী ধ্বংস হয়ে যায় ৷ আর এতে প্রাণ হারায় প্রায় ১,৩০০ মানুষ এবং অঙ্গহানি হয় প্রায় ২ হাজারের মতো মানুষের, আহত হয় ১২ হাজার মানুষ। গৃহহহীন হয় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ। সেই সময়ের আঘাতে পঙ্গুত্ব হয়ে আজও অনেকেই অসহায় জীবন যাবত করে চলছে অনেকই দীর্ঘ দিন অসহ্য জ্বালা যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর কাছে হেরে গেছে ।
এই দিনটি উপলক্ষে আজ বাদ আছর হরগজ শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে এলাকাবাসী। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ৷
এসআর