খুলনা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে গড়াই ও রুপসা পরিবহন একের পর এক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচলের কারণে এই পরিবহন দুটি পথচারীদের কাছে এখন ভয়ংকর যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ৯ এপ্রিল যশোর সদরের চুড়ামনকাটিতে বেপরোয়া রুপসা পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্রী উর্মি খাতুনের (১৪) মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্র জনতা যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
এর আগে রূপদিয়ার হাটবিলা-জামতলায় রুপসা পরিবহনের একটি বাস উল্টে হেলপার জামাল হোসেন (৪৫) নিহত হন। গত দেড় বছরে খুলনা- ঝিনাইদহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় অন্তত ১২০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে গড়াই রুপসার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত দিনে মহাসড়কের কালীগঞ্জ বারোবাজার তেলপাম্পের কাছে গড়াই পরিবহনের একটি বাস দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহতের ঘটনাটি ছিলো আলোচিত। এরমধ্যে ঘটনাস্থলে মারা যান ১১ জন। নিহতদের ৯ জন পুরুষ, ২জন নারী ও ১ জন শিশু। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অন্ততঃ ৩০ জন। অতিরিক্ত গতির কারণে চালক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললে বাসটি সড়কের ওপর উল্টে যায়।
এছাড়াও বিগত দিনে গড়াই-রুপসা পরিবহনের বাসের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের উত্তরপাড়ায় সাইফুল ইসলামের মেয়ে মালিয়া (৩), বাগডাঙ্গা গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে নির্মাণ শ্রমিক নাসির উদ্দিনের জীবন(৩৫) ও অজ্ঞাত এক যুবক (৩০)।
বিভিন্ন পত্রিকা ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী গত দেড় বছরে খুলনা-ঝিনাইদহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২০ জন। এরমধ্যে গড়াই ও রুপসা পরিবহনের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আনিসুর রহমান জানান, গড়াই ও রুপসা পরিবহন এক আতংকের নাম। এ দুই পরিবহনের চালকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এভাবে বেপরোয়া চলাচলে মানুষ ক্রমেই ক্ষুব্ধ হচ্ছে। চুড়ামনকাটি বাজারের সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল দেখলেই বোঝা যায় তারা ফাঁকা স্থানে কতো গতিতে গাড়ি চালান।
তারমতো আরো অনেকেই জানান, গড়াই ও রুপসা পরিবহন এখন ভয়ংকর যানে পরিণত হয়েছে। সব সময় বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। যে কোন ভাবেই সামনের যানবাহনকে অতিক্রম করার চেষ্ঠা থাকে গড়াই ও রুপসার চালকদের। এ কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। গড়াই ও রুপসা চালকদের লক্ষ্য অন্য কোন বাসকে টপকে সামনের কাউন্টারে পৌঁছে আগে যাত্রী উঠানো। এছাড়া নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোতে সময় বেঁধে কারণে তারা ছুটে চলে বেপরোয়া গতিতে। এসব কারণেই প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সেই সাথে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সূত্র জানায়, প্রতিদিন ৩৬ টি গড়াই কুষ্টিয়া থেকে খুলনায় ছেড়ে আসে। আর খুলনা থেকে ৪৩টি রুপসা পরিবহনের বাস কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে যায়। রুপসা পরিবহন ৯ মিনিট এবং গড়াই পরিবহন ১০ মিনিট পরপর ছাড়ে। নিধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। যে কারণে তাদের বেপরোয়া গতিতে ছটতে হয়।
এই বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের বারোবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহসীন হোসেন জানান, গড়াই ও রুপসা পরিবহনের দ্রুত গতিতে চলাচলের বিষয়ে তারা অবগত। চালকদের একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে নিয়ন্ত্রনে মধ্যে গাড়ি চালানোর জন্য। আবার মালিকদের বলা হয়েছে। নওয়াপাড়া থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গড়াই ও রপসা পরিবহনের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। প্রতিটি বাস চালকের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাও করা হয়েছে। কিন্তু তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রনে আসেনি। বাস সিন্ডিকেট সময় বেঁধে দেয়ার কারণে চালকরা ওভার স্পিডে গাড়ি চালান। এটা দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। যানবাহনের বেপরোয়া গতি ঠেকাতে নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তদারকি করা হয়।
এসআর