এইমাত্র
  • বার্সেলোনাকে কিনতে ১০ বিলিয়ন ইউরো’র প্রস্তাব সৌদি যুবরাজের
  • বিজয় দিবসে যেসব সড়ক এড়িয়ে চলতে বলেছে ডিএমপি
  • সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শামীমের বাড়িতে শোকের মাতম
  • রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধার পর খুলে দেওয়া হবে স্মৃতিসৌধের প্রবেশদ্বার
  • হাসিনা-কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল
  • কাজিপুরে মানসিক ভারসম্যহীন ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
  • সিরাজগঞ্জে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার
  • গভীর রাতে কৃষকের গরু জবাই করে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা
  • খড়ের আড়ালে চোলাই মদ পাচারের চেষ্টা, আগুন দিল জনতা
  • ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সাতকানিয়ায় চিকিৎসকশূন্য ১৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম

    সাতকানিয়ায় চিকিৎসকশূন্য ১৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

    মো. জাহেদুল ইসলাম, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম

    চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণ প্রান্তের জনবহুল উপজেলা সাতকানিয়া। প্রায় চার লাখ মানুষের এই উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। কাগজে-কলমে প্রতিটি ইউনিয়নে ডাক্তার পদায়ন থাকলেও বাস্তবে তাদের দেখা মেলে না মাসের পর মাস। ফলে প্রতিদিনই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।

    উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সাতকানিয়ায় ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ১৩টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে সাতকানিয়া, বোমাংহাট, কাঞ্চনা ও খাগরিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং চরতী, নলুয়া, আমিলাইশ, এওচিয়া, মাদার্শা, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, কেঁওচিয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, পুরানগড়, ছদাহা ও সোনাকানিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকশূন্য।

    নথি অনুযায়ী, এসব কেন্দ্রে ১৭ জন চিকিৎসক পদায়ন আছেন। কিন্তু তাদের অনেকেই কর্মস্থলে না গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছেন। ফলে ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা সীমিত হয়ে পড়েছে শুধু ওষুধ বিতরণ ও প্রাথমিক পরামর্শে, যা ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের ওপর নির্ভর করছে।

    গত ২০ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন এক অফিস আদেশে নির্ধারিত দিনে চিকিৎসকদের নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। উদ্দেশ্য ছিল ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবার ঘাটতি পূরণ। কিন্তু সোমবার (২৭ অক্টোবর) সরেজমিনে বাজালিয়ার বোমাংহাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেলো, হাসপাতালের কক্ষগুলো ফাঁকা, রোগীরা অপেক্ষায়। কোথাও কোনো চিকিৎসক নেই।

    ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোই গ্রামের মানুষের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার প্রথম ঠিকানা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় স্থানীয়রা এখন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা হারাচ্ছেন। ফলে ছোটখাটো রোগে আক্রান্ত সাধারণ মানুষও বাধ্য হচ্ছেন ব্যক্তিগত চেম্বার, হোমিওপ্যাথি কিংবা পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন নিতে। এতে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয় ও ভুল চিকিৎসার ঝুঁকি।

    স্থানীয়দের মতে, প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন নিয়মিত চিকিৎসক উপস্থিতি নিশ্চিত করলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন যেমন প্রয়োজন, তেমনি মাঠপর্যায়ে চিকিৎসা সেবাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের টাকায় বেতন নেওয়া চিকিৎসকদের মাঠে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করাই এখন সময়ের দাবি।

    স্থানীয় হামিদা ইয়াসমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমাদের এলাকায় হাসপাতাল আছে, কিন্তু ডাক্তার নেই। অসুস্থ হলে সবাই পল্লী চিকিৎসক বা ওষুধ বিক্রেতার কাছে যায়। শুনতে শুনতে ক্লান্ত—জনবল সংকট, বাজেটের ঘাটতি। কিন্তু ডাক্তার তো পদায়ন আছেন! তাহলে আসেন না কেন?'

    ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. বাবুল বলেন, 'আমাদের এখানে একজন চিকিৎসক আছেন বলে শুনেছি, কিন্তু কখনো তাকে দেখিনি। সপ্তাহে একদিন গেলেও অনেক মানুষ উপকৃত হতো। সরকারি চাকরির বেতন তো জনগণের টাকায়—তাহলে জনগণের সেবা দেবেন না কেন?'

    খাগরিয়া ইউনিয়নের আলী আকবর জানান, 'আমাদের হাসপাতাল ভবনটা ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে, সংস্কার নেই। বেশিরভাগ সময় চিকিৎসক আসে না। সাতকানিয়া যাওয়া-আসায় খরচ ১৪০ টাকা। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের দোকান বা পল্লী চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। সরকার হাসপাতাল বানিয়েছে, ডাক্তার দিয়েছে, কিন্তু সেবা নেই—এই যন্ত্রণায় গ্রামের মানুষ আজও ভোগে।'

    নির্ধারিত দিনে অনুপস্থিত বাজালিয়ার বোমাংহাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদায়নকৃত ডা. মো. মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন।'

    তবে এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

    চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'আমি জানতাম ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত সপ্তাহে দুই দিন ডাক্তার সেবা দেন। কিন্তু কেউ মাসের পর মাস যাচ্ছেন না—এটা তো অগ্রহণযোগ্য। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।'

    আরডি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…