এইমাত্র
  • বার্সেলোনাকে কিনতে ১০ বিলিয়ন ইউরো’র প্রস্তাব সৌদি যুবরাজের
  • বিজয় দিবসে যেসব সড়ক এড়িয়ে চলতে বলেছে ডিএমপি
  • সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শামীমের বাড়িতে শোকের মাতম
  • রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধার পর খুলে দেওয়া হবে স্মৃতিসৌধের প্রবেশদ্বার
  • হাসিনা-কামালের আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল
  • কাজিপুরে মানসিক ভারসম্যহীন ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
  • সিরাজগঞ্জে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার
  • গভীর রাতে কৃষকের গরু জবাই করে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা
  • খড়ের আড়ালে চোলাই মদ পাচারের চেষ্টা, আগুন দিল জনতা
  • ওসমান হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    লাকী আপার পাঠশালা, গ্রামের আঙিনায় এক ‘স্বপ্নের আলো’

    এনামুল হক দুখু, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২০ পিএম
    এনামুল হক দুখু, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২০ পিএম

    লাকী আপার পাঠশালা, গ্রামের আঙিনায় এক ‘স্বপ্নের আলো’

    এনামুল হক দুখু, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২০ পিএম

    রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম রহিমাপুর মোল্লাপাড়া। যেখানে চারদিকে সবুজ ক্ষেত-খামার, কাঁচা-পাকা রাস্তা আর দরিদ্র মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম। ঠিক এই গ্রামীণ প্রেক্ষাপটেই জ্বলে উঠেছে এক টুকরো আলো লাকী আপার ফ্রি পাঠশালা।

    এই পাঠশালার পেছনে আছেন মোছা: মোবাশ্বেরা খাতুন লাকী। যাকে সবাই "লাকী আপা" নামে জানে। নিজের স্বপ্ন ভেঙে গেলেও অন্যদের স্বপ্ন দেখানোর দায় তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন।

    ছোটবেলায় লাকি আপার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ প্রবল ছিল, কিন্তু পরিবারের আর্থিক দুর্দশা ও অসুস্থ বাবা-মায়ের দেখাশোনা সেই স্বপ্নকে করেছিল বাধাগ্রস্ত ।

    বাবা মোবারক প্রামানিকের টানা পাঁচ-পাঁচবার অপা‌রেশন-অসুস্থতা, মা ছারপিয়া বেগমের ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যুর ধাক্কা, এবং পাঁচ বোনের সংসারের দায়িত্ব সব মিলিয়ে কষ্টের পাহাড় সামলাতে হয়েছে তা‌কে।

    মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১০ম শ্রেনী‌তে পড়া অবস্থায় ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির অধীনে শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি নেন।

    পড়ান স্থানীয় কবিরাজপাড়া ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির স্কু‌লে। ‌সে সময় বেতন মাত্র ৮শ টাকা। সে টাকায় নি‌জের পড়াশুনার পাশাপা‌শি সংসারেও সহায়তা করতেন।

    তার শিক্ষা প্রদা‌নের কৌশলে সে সময় তি‌নি হ‌য়ে ও‌ঠেন তারাগঞ্জ ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মরসূচি শ্রেষ্ট শি‌ক্ষিকা।

    ব্র্যাকের হয়ে ফরিদপুর,রাজশাহী, দিনাজপুর রংপুরসহ বি‌ভিন্ন জেলায় শিক্ষা বিষয়ক নানা প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

    ১৯৯৯ সালে স্থানীয় বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে ফাস্ট ডিভিশনে এসএসসি পাশ করেন। পরে সৈয়দপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হলেও পা‌রিবা‌রিক কারণে পড়াশোনা নিয়মিত কর‌তে পারেননি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০০১ সালে এইচএসসি পাশ করেন।

    বর্তমানে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গে‌লেও শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছেটা ছিল অটুট। নিজের স্বপ্ন পূরণ না হলেও অন্যদের স্বপ্ন দেখানোর সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাই নিজ বাড়ির এক‌টি ঘ‌রে মাত্র ৮-১০ জন শিশুকে নিয়ে পড়ানো শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেই ছোট্ট ঘ‌ড়ের পাঠশালা পুরো গ্রামের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ও‌ঠে।

    এখানে পড়াশোনার জন্য কোনো ফি বা খরচ লাগে না। বাঁশ দিয়ে তৈরি বাংলা ঘরে মাটির মেঝেতে চট বিছিয়ে শিশুদের বসানো হয়। নেই কাঠের বেঞ্চ, নেই চেয়ার-টেবিল, তবু অভিভাবকদের চোখে এটি ভবিষ্যতের আলো।

    লাকি আপা শুধু বইয়ের পড়াই শেখান না। শেখান শৃঙ্খলা, সততা, মানবিকতা ও দেশপ্রেম। শিশুদের প্রতিদিন পাঠদানের পাশাপাশি জীবনবোধের গল্প শোনান। তাই শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি শিক্ষক নয়, হ‌য়ে ও‌ঠেন মা বা বড় বোনের মতো আপনজন।

    গ্রামের দিনমজুর আনা হোসেন বলেন, “আমার ছেলে কখনো স্কুলে যেত না। এখন লাকী আপার কাছে পড়ে নাম-ধাম লিখতে পারে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন সে চাকরি করবে ‘

    উত্তর রহিমাপুর নয়াহাট সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মো: ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘লাকি আমারই ছাত্রী ছিল। ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তার পাঠদানের কৌশল ভিন্ন, খুব সহজেই যে কোনো বিষয় শেখাতে পারে। এটি তার বিশেষ গুণ।’

    বর্তমানে তার পাঠশালায় সকাল-বিকেল দু’বেলা মোট ২৫–৩০ জন শিশু নিয়মিত পড়াশোনা করে। ইতোপূর্বে তার হাত ধরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। তাদেরকে কেউ জেলা স্কুল শিক্ষক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, আবার কেউ সরকারি চাকরিজীবী।

    নিজের স্বপ্ন ভেঙে গেলেও গ্রামের অগণিত শিশুদের স্বপ্ন দেখানোর শক্তিই তাকে ভরিয়ে রেখেছে। রহিমাপুরের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেন, লাকী আপার মতো একজন মানুষ থাকলে অন্ধকার ভেদ করেই আলো আসবেই।

    মোবা‌শ্বেরা খাতুন লাকীর স্বপ্ন কেউ সহায়তা বা সহ‌যোগীতার হাত বা‌ড়ি‌য়ে দি‌লে ভ‌বিষ‌্যতে বড় প‌রিস‌রে এক‌টি স্কুল খুল‌বেন।

    তি‌নি ব‌লেন, ‘একজন মানুষ চাইলে পুরো সমাজকেই বদলে দিতে পারে। এজন‌্য শুধু স‌দিচ্ছা প্রয়োজন।’

    নিজের স্বপ্ন পূরণ না হলেও তিনি অন্যদের স্বপ্ন দেখার সুযোগ তৈরি করেছেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই ।

    ইখা

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…