ফ্লাস্ক হাতে নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরে চা বিক্রি করে সংসার চালান জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার লাভলী বেগম (৪৭)। স্বামী পরিত্যাক্তা হয়ে ২০ বছর ধরে দোকানে দোকানে ফ্লাস্ক হাতে নিয়ে চা বিক্রি করে দিব্যি সংসার চালাচ্ছেন তিনি। মানুষের ইচ্ছাশক্তি আর মনোবল থাকলে সবাই সম্ভব তারই উদাহরন যেন লাভলী বেগম। তবে তার প্রয়োজন একটু সহযোগীতা।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, লাভলী আক্তারের সাথে ৩০ বছর আগে আবুল হোসেন বল্টুর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তান জন্মায়। প্রায় ১০ বছর পর স্বামী বল্টু লাভলীকে তালাক দিয়ে অন্য জায়গায় বিয়ে করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে শিমলা পল্লী এলাকার সিটঘরে খলিল হোসেনের বাড়ী ভাড়া নেন। আলহাজ জুট মিলে ড্রয়িং মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে কাজ করে মেয়ে আলোকে বিয়ে দিয়েছেন উপজেলার সানাকৈর এলাকায়। হঠাৎ করে আলহাজ জুট মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করেন এই নারী। পরে অন্যের টাকায় ফ্লাস্ক কিনে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ও দোকানে দোকানে চা বিক্রি করা শুরু করেন তিনি। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত শিমলা বাজারের বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘুরে ৪/৫ ফ্লাস্ক চা বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭শ টাকার চা বিক্রি হয়। এতে করে প্রতিদিন খরচ বাদ দিয়ে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা থাকে। যা দিয়ে জীবন চালাচ্ছেন লাভলী। তার এমন করুন অবস্থা দেখে প্রায় ১০ বছর ধরে বাসা ভাড়া না নিয়ে বিনা ভাড়ায় নিজের বাড়ীতে থাকতে দিয়েছেন খলিল হোসেন। তার এমন মহানুভবতা ও উদারতা মুগ্ধ করেছে স্থানীয়দের।
বাড়ীর মালিক খলিল হোসেন বলেন, ‘লাভলী অনেক বছর ধরে আমার বাসায় ভাড়া আছেন। আগে জুটমিলে চাকরি করতো কিন্তু মিল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকট ও ধার দেনায় জরিয়ে পরেন তিনি। তার স্বামী ও ছেলে নেই। একটা মেয়ে আছে তাকে আমরা এলাকাবাসী সহযোগীতায় বিয়ে দিয়েছি। তার এমন পরিস্থিতি দেখে আমি তাকে বিনা ভাড়ায় আমার বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেই। বর্তমানে তিনি আমার বাসায় থেকে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে জীবন চালাচ্ছে। সরকারী বা কোন সহযোগীতা পেলে হয়তো এই অসহায় মেয়েটির ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
লাভলী বেগম সময়ের কণ্ঠস্বরে বলেন, ‘স্বামী তালাক দেয়ার পর একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে ছিলাম। মেয়েকে মানুষ করতে পাট মিলে কাজ করেছি। পাটমিল হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। সংসার চালানোর জন্য অন্য কোন উপায় না দেখে অন্যের সহযোগীতায় ফ্লাস্ক কিনে বিভিন্ন বাজারের দোকান গুলোতে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করি। যা রোজগার হয় তাতেই আমার একার জীবন চলে যাচ্ছে। তবে এখন শরীরে নানা অসুখ হয়েছে। এভাবে ফ্লাস্ক নিয়ে হেটে হেটে চা বিক্রি করতে খুব কষ্ট হয়। তবুও পেটের দায়ে সব কষ্ট মেনে নেই। আর্থিকভাবে একটু সহযোগীতা পেলে অনেকটা উপকার হয়।
এসআর