জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির অন্যতম নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর শোকে জাতি যখন চরম দুঃখ-ভারাক্রান্ত, ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল সাধারণ মানুষ; ঠিক এমন এক সময়ে দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার।
এদিন রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সবকিছু তছনছ হয়ে যাওয়ায় গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত হয়নি পত্রিকা দুটি। দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ হয়ে যায় তাদের অনলাইনের কার্যক্রমও। অসহায় সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে হামলার শিকার হন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক বর্ষীয়ান সাংবাদিক নূরুল কবির।
প্রথম আলো ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার ইতিহাসে বাংলাদেশের জন্য এক কালো দিন আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন আসন্ন নির্বাচন বানচাল করতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি এবং দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়ে দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে সরকারের শিথিল মনোভাবের অভিযোগও তোলা হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ডেইলি স্টার, প্রথম আলো ও নিউএজের সাংবাদিকদের প্রতি আমরা বলতে চাই আমরা আপনাদের পাশে আছি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা মানেই সত্যের ওপর হামলা। আমরা আপনাদের পূর্ণ ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিচ্ছি।’
গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পল্টনে গুলিবিদ্ধ হন হাদি। গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হাদির মৃত্যুর খবর আসার কয়েক ঘণ্টা পরই প্রথমে প্রথম আলো এবং কিছুক্ষণ পরই ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ওই হামলা চালানো হয়। প্রথম আলোর কর্মীরা কোনোভাবে বের হতে পারলেও, ডেইলি স্টারের বেশি কিছু কর্মী দীর্ঘসময় ধরে আটকা পড়েন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
গতকাল সকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সেখানে ছুটে যান।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় ৭টার দিকে একদল ব্যক্তি কার্যালয়ে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায় এবং পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে অগ্নিকা-ের খবর পাওয়া যায়। এরপর ৭টা ৪৭ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে আরও তিনটি ইউনিট যুক্ত হয়ে মোট চারটি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি আরও জানান, অগ্নিকা-ে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনাটির কারণ শনাক্তে তদন্ত চলছে। কেউ আগুন দিয়েছে নাকি কোনোভাবে আগুন লেগেছে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না।