হবিগঞ্জ জেলায় গত ১০ মাসে পুকুরের পানিতে ডুবে ৩৯ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে আট জোড়া মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও লাখাই উপজেলায় কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এরমধ্যে সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে হাওর অধ্যুষিত এলাকা বানিয়াচং উপজেলায়। এ উপজেলায় গত ১০ মাসের মৃত্যু হয়েছে ৯ শিশুর। আর সব থেকে কম মৃত্যু হয়েছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে একজনের। এছাড়াও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় চারজন, নবীগঞ্জ উপজেলায় তিনজন, বাহুবল উপজেলায় আটজন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় তিনজন, মাধবপুর উপজেলায় আটজন ও চুনারুঘাট উপজেলায় মৃত্যু হয় তিন শিশুর।
জানা যায়, গত ১ অক্টোবর বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায় নাহিদা আক্তার নামে ৬ বছরের এক শিশু। ৩ অক্টোবর পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়নের যশকেশরি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার (২)। ২১ অক্টোবর মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের আরিছপুর গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায় সোহেল মিয়ার ছেলে ইব্রাহীম (২)।
২৫ অক্টোবর আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামে ওয়াসিম মিয়া নামে ১৩ মাসের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। সে ওই গ্রামের মিঠু মিয়ার ছেলে। একইদিন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল ঢালি হাটিতে পরিবারের সঙ্গে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে মোস্তাফিজুর রহমান মমিন নামে দুই বছরের শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
২৭ অক্টোবর বানিয়াচং উপজেলার কামালখানি গ্রামে তাসিবা আক্তার জান্নাত নামে ১৮ মাস বয়সী এক শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। সে ওই গ্রামের কামরুল হাসানের মেয়ে। ২৯ অক্টোবর নবীগঞ্জ উপজেলার পানি উমদা ইউনিয়নের বড়চর গ্রামে উসমান মিয়া নামে দুই বছরের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ওই গ্রামের আজাদ মিয়ার ছেলে।
১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর উপজেলায় পৃথক ঘটনায় পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। মৃতরা হলো- মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের স্বপন মিয়ার চার বছরের মেয়ে ফাতেমা বেগম ও ইটাখোলা গ্রামের রুবেশ দেবনাথের দুই বছরের মেয়ে নিলিমা দেবনাথ।
১৮ সেপ্টেম্বর নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সদরাবাদ গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায় দুই শিশু। মৃত শিশুরা হলো- ওই গ্রামের মালেক মিয়ার আট বছরের ছেলে ইকবাল হোসেন ও ছয় বছরের বাবুল হোসেনের ছেলে রাফি আহমেদ। ২২ সেপ্টেম্বর মাধবপুর উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের বরগ গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় ইয়ামিন নামে চার বছরের এক শিশু। সে ওই গ্রামের উজ্জ্বল মিয়ার ছেলে।
২৭ সেপ্টেম্বর বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৪ নম্বর দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের (নাপিত পাড়া) এলাকায় পানিতে ডুবে মারা যায় মুবিন নামে ৬ বছরের এক শিশু। সে ওই গ্রামের তোফাজ্জুল মিয়ার ছেলে।
২ আগস্ট বাহুবল উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা যায় ৬ বছরের শিশু তোহা। একই দিন একই উপজেলার দেড় বছর বয়সী দিতি প্রিয়া নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার চিচিরকোট গ্রামের চন্দ্র শেখরের মেয়ে।
৯ আগস্ট আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের আটপাড়া এলাকায় পানিতে ডুবে মারা যায় তাহমিদুল নামে দুই বছরের এক শিশু। সে ওই গ্রামের বশির মিয়ার ছেলে। ১০ আগস্ট বানিয়াচং উপজেলার নোয়াপাথারিয়া গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় তাজ উদ্দিন রোহান নামে এক ৭ বছরের শিশু। সে ওই গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে। ১৫ আগস্ট চুনারুঘাট উপজেলার রাণীগাওয়ে মারা যায় রুয়েল আহমেদ চৌধুরী নামে এক প্রতিবন্ধী। ২০ আগস্ট বাহুবল উপজেলার বড়ইউড়ি গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় ওই গ্রামের আউয়াল খানের ৪ বছরের মেয়ে তাহিরা আক্তার।
৫ জুলাই চুনারুঘাট উপজেলার মহিমাউলা গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় রিহান নামে ৫ বছরের শিশু। সে ওই গ্রামের তৌহিদ মিয়ার ছেলে। মাধবপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামে পুকুর থেকে শাপলা তুলতে গিয়ে মারা যায় ঝিলিক নামে ১১ বছরের এক শিশু। ৭ জুলাই বাহুবল উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে মারা যায় রাইসা আক্তার নামে এক শিশু। ১০ জুলাই সদর উপজেলার ধল গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় রিহাদ মিয়া নামে ৬ বছরের এক শিশু।
১৩ জুলাই বাহুবল উপজেলার ডুবাঐ গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় দেড় বছরের শিশু ওসমান গণি। ১৬ জুলাই বানিয়াচংয়ের উত্তর সাঙ্গর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় দুই চাচাতো বোন। তারা হলো- ওই গ্রামের এমরান হোসেনের চার বছরের মেয়ে ফাতেমা আক্তার ও আমিরুল ইসলামের তিন বছরের মেয়ে মাহমুদা খাতুন। ১৭ জুলাই মাধবপুর উপজেলার ধলগাঁও গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় দুই শিশু। তারা হলো- ওই গ্রামের জহিরুল ইসলামের পাঁচ ছেলে আরিফ মিয়া ও নজির মিয়ার সাত বছরের ছেলে কারিনা আক্তার। ২৫ জুলাই বানিয়াচংয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় আমিনা বেগম নামে চার বছরের এক শিশু।
৩ জুন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায় মিরাজ মিয়া নামে এক শিশু। ৭ জুন আজমিরীগঞ্জ উপলোর মাধবপাশা গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় নুবা আক্তার নামে দেড় বছরের এক শিশু। ৮ মে বানিয়াচং উপজেলার জাতুকুর্ণ পাড়া মহল্লায় পানিতে ডুবে মারা যায় কুলসুমা আক্তার নামে এক শিশু। ২৬ মে চুনারুঘাট উপজেলার চাটপাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় তাসমিয়া চৌধুরী লামিয়া নামে এক শিশু।
২৬ মে বাহুবল উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় ১০ বছরের শিশু সাব্বির আহমদ। ১ এপ্রিল বাহুবল উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় ইয়াছিন মিয়া নামে ৪ বছরের এক শিশু। একই দিন একই গ্রামের দেড় বছর বয়সি জান্নাত আক্তাও পানিতে ডুবে মারা যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি মাধবপুর উপজেলার আদাঐর গ্রামে পানিতে ডুবে মারা যায় আরাফ নামে এক শিশু।
হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুখলেছুর রহমান উজ্জল বলেন, শিশু মৃত্যুররোধ করতে হলে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। বেশিরভাগ অসচেতনতার জন্যই শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের নজরে রাখতে হবে। কারণ এ সময়টাতে পরিবারের সদস্যরা কাজকামে চলে গেছে শিশুরা খেলতে গিয়ে পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়