বইছে ঝিরঝির বাতাস, পড়ছে শীত। আর এই শীতের মৌসুম শুরু হতেই খেজুরের রসের জন্য দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গাছিরা ব্যস্ত সময় পার করছে। এরইমধ্যে রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে খেজুর গাছ। এখানকার খেজুরের রস জ্বালিয়ে তৈরি হওয়া সুস্বাদু গুড় নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে জেলার প্রায় গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুরগাছ পরিস্কার করার কাজ শেষে এখন প্রতিদিন ভোরবেলায় রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। অনেকে আবার খেজুর রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রয়ও করেছে। অনেকে গাছ গুলো প্রস্তুত করে শোকাতে দিয়েছে। কয়েক দিন পর গাছ থেকে পুরোদমে শুরু হবে রস সংগ্রহের কাজ। খেজুর রস ও গুড়ের কদর রয়েছে জেলার প্রতিটি মানুষের কাছে।
বামন্দী গ্রামের নজরুল আলী বলেন, শীত আসলেই খেজুর রসের গুড় তৈরি ভাবা পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, রসপিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। আর খেজুর গুড়ের তৈরি পিঠাগুলো খেতেও খুব সুস্বাদু।
হাড়াভাঙ্গা গ্রামের মজনুল হক বলেন, শীতের সকালে রস ব্যবসায়ীরা সকাল সকাল উঠে হাক ছাড়েন এই রস আছে রস। খেজুর রস খেতে সত্যিই সুস্বাদু লাগে। গাছিরা প্রস্তুত করছে গাছ, খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠা। আর শীতের সকালে খেতে ভালো লাগে খেজুরের রস।
জানা যায়, এখনও ৪ মাস ধরে রস সংগ্রহ চলবে। এতে প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় হয় গাছিদের। কারণ খেজুর রস সংগ্রহের জন্য কোন খরচ হয় না। তবে ঝুঁকি নিয়ে গাছ প্রস্তুত ও রস সংগ্রহ করতে হয় বলে জানান গাছিরা।
তেরাইল গ্রামের খেজুর গাছি ছলেমান আলী বলেন, গাছগুলো প্রস্তুত করে গাছে কলস বাঁধা হয়েছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে রসও হচ্ছে। শীতের শিশির যত বাড়বে ঘাট দিয়ে তত গতিতে বের হবে রস। আশা করছি এবার পর্যাপ্ত পরিমাণে রস পাওয়া যাবে। ৪৫টি গাছের কাজ সম্পূর্ণ করেছি। গাছ মালিকের সাথে কথা হয়েছে গাছ প্রতি দুই কেজি করে গুড় দেওয়া লাগবে। এ মৌসুমে দাম ভালো পেলে আশা করছি ভালো লাভ হবে
খেজুর গাছি রেজাউল ইসলাম বলেন, গাছ ছাপ করা হয়ে গেছে, যে রস সংগ্রহ করছে তার সকালে বিক্রয় করে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে। খেজুর রসের চাহিদা ব্যাপক কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে রস না পাওয়ায় দিতে পারছি না। শীতও পড়ছে। দুই কলস রস সংগ্রহ করলে ১ কেজি করে গুড় তৈরি হয়। আর রস বিক্রয় হয় ১ গ্লাস ১০ টাকা। আর গুড় বিক্রয় হয় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, মেহেরপুর জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে খেজুর গাছ। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করার কাজ। এই খেজুরের রস ও গুড় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায়। আর খেজুর গাছ সাফ করে যে পাতাগুলো রাখা হয় সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন নকশার পাটি তৈরি করা হয়।
মেহেরপুরের এক কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, শীত মনে করিয়ে দেয় সুস্বাদু খেজুর রস ও গুড়ের কথা। গাছিরা রস সংগ্রহ করে বিভিন্ন গ্রামে বিক্রয় করে বেড়ায়। তাছাড়া জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেও বেশি দামে বিক্রয় করে। আশা করছি এবার গাছিরা লাভবান হবে। বিভিন্ন চাষীদের বলাও হয় জমির আইল দিয়ে কিছু খেজুর গাছ লাগাতে। এ জেলার মাটি ভালো হওয়ার কারণে রস ও গুড় সুস্বাদু হয়।