যশোরে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকে ভুল সিজারে রিমা খাতুন (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুন) সদর উপজেলার রুপদিয়ার গ্রামীণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার সিজার করা হয়। তবে নবজাতক সুস্থ আছে। রিমা নরেন্দ্রপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী।
এ ঘটনায় প্রসূতির স্বজন ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ক্লিনিকটি ভাংচুর করেছে। পালিয়ে রক্ষা পান এমবিবিএস ডা. নুরছালী ও তার স্বামী ক্লিনিক মালিক জামাল হোসেন। পরে সিভিল সার্জনের নির্দেশে ক্লিনিকটিকে সিলগালা ও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৮ টার দিকে তার স্ত্রীর রিমার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। এসময় গ্রামের এক দালালের খপ্পড়ে পড়ে তাকে রুপদিয়া বাজারের গ্রামীণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। তাৎক্ষণিক রোগীর সিজার করেন ডা. নুরছালী ওরফে তুলি। সিজারে পুত্র সন্তান প্রসব করেন রিমা।
রফিকুল ইসলাম আরও জানান, সিজারের কিছু সময় তার স্ত্রী রিমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসক ও ক্লিনিকের মালিক দায় এড়াতে রোগীকে খুলনায় রেফার্ড করেন। সেখানে নেয়ার পথে রিমার মৃত্যু হয়।
রফিকুলের অভিযোগ, ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে তার স্ত্রী রিমা মারা গেছেন। গ্রামীণ ক্লিনিকের সামনে মৃতদেহ নিয়ে পৌঁছানোর আগেই ডাক্তার নুরছালী তুলি ও তার স্বামী ক্লিনিক মালিক জামাল হোসেন পালিয়ে যান। পরে তার স্বজনরা ও এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ক্লিনিক ভাঙচুর করে।
এসময় তারা দাবি করেন গ্রামীণ ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবার নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়। গাইনী বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি না থাকার পরও ডা. নুরছালী তুলি একের পর এক রোগীর সিজার করেন। এর আগেও গ্রামীণ ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মিহির মন্ডল জানিয়েছেন, ভুল সিজারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে ক্লিনিক ভাঙচুরের খবর পেয়ে পুলিশের একটি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জনরোষ এড়াতে আগেই চিকিৎসক ও মালিক পালিয়ে যান। রিমার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এস আই মিহির মন্ডল আরও জানান, রিমার নবজাতক পুত্র সন্তানকে তার ফুফুর হেফাজতে রাখা হয়েছে। সে সুস্থ আছে। গ্রামীণ ক্লিনিকের মালিক জামাল হোসেন জানান, ভুল সিজারে রিমা মারা যাননি। রক্ত শূন্যতার কারণে ওই প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, ভুল সিজারে প্রসূতির মৃত্যুর খবর জানতে পেরে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলে যান। তার সাথে ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল, মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ রনি প্রমুখ। এসময় গ্রামীণ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করা হয়েছে।
এছাড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মাউদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির বাকি দুইজন হলেন সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. রেহেনেওয়াজ ও স্কুল হেলথ ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডা.লায়লা নার্গিস। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এমআর