কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সন্তানদের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসেন ভূইয়ার ছেলে ধন মিয়া। অভিযুক্ত সন্তানরা হলো, লিটন (৫০), আবুল হোসেন (৪০) , মোখলেছ (৩৫)।
পরিবারের সদস্যরা জানায় , উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের পূর্বপাড়ার এলাকার মৃত আবুল হোসেন ভূইয়ার ছেলে ধন মিয়া পারিবারিক জীবনে দুটি বিয়ে করেন তিনি। প্রথম পক্ষের ৮ ও দ্বিতীয় পক্ষের ৭ জন সন্তান রয়েছে তার। এর মধ্যে প্রথম পক্ষের সন্তান স্কুল শিক্ষক মুখলেছুর রহমান তার পছন্দমতো সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় প্রায়ই তাকেসহ সৎ মা ও ভাই-বোনদের মারধর করেন। সন্তানের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে প্রথম পক্ষের সন্তানদের নামে মূল বাড়িসহ জমি লিখে দেন তিনি। পরে দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের নামে জমি ও নতুন বাড়ি লিখে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মুখলেছুর রহমান ও তার ভাইয়েরা। বাবা ও সৎ মাকে মারধর করেন তারা। সন্তানদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালতে মামলা করেন ধন মিয়া। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয় প্রথম পক্ষের সন্তানরা।
বাবা ধন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, জমি বিক্রি করে বড় স্ত্রীর সন্তানদের প্রবাসে পাঠিয়েছি। তারা আমার কোন খোঁজ রাখে না। বরং সম্পত্তি লিখে নিতে আমাকে কয়েক দফায় মারধোর করেছে। আমি থানা পুলিশের আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখান থেকে মীমাংসা করে দিলেও আমার প্রথম পরিবারের সন্তানরা বিচার মানে না। আমার ছোট ছেলে জাফরনগর প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার নাম মোখলেছ। সে আমাকে মারধোর করেছে। আমি (২৮ জুলাই) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছি। আমি আমার ছেলের বিচার চাই।
দ্বিতীয় পরিবারে সন্তান কুতুবউদ্দিন বলেন, আমার বাবাকে তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা মারধোর করে সম্পত্তির জন্য। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে দায়ের কোপ দিয়ে জখম করে। আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
অভিযোগকারী ধন মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, সম্পত্তির ভাগ নিতে আমাকে ও আমার স্বামীকে মারধোর করে তার প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা। আমার ভাত খাওয়ার থালাটা পর্যন্ত তারা কেড়ে নিয়ে গেছে। তাদের অত্যাচারে বাড়িতে থাকতে পারছি না। আমি তাদের বিচার চাই।
অভিযুক্ত ছেলে মোখলেছুর রহমান জানান, আমার বাবার বয়স হয়েছে। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবার বাবাকে জিম্মি করে আমাদের সকল সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। তাদের অভিযোগ মিথ্যা। উল্টো বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা আমাদের মারধোর করে। পরে আমি কিশোরগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া বলেন, ধন মিয়া সম্পর্কে আমার চাচা হয়। আমরা সামাজিক ভাবে তার দুই পরিবারকে মিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। ধন মিয়ার সম্পত্তির বেশির ভাগ অংশই তার দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিবারের সন্তানদের দিয়ে দিয়েছেন। পরে সামাজিক ভাবেও ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছি। ধন মিয়া চাইলেই এর সমাধান হয়ে যেতো। ভাইদের মধ্যে বিবাদ রয়েছে তবে প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা তার বাবা-মাকে মারধোর করেছে বিষয়টি আমার জানা নেই।
ভৈরব কুলিয়ারচর সার্কেল এএসপি দেলোয়ার হোসেন জানান, বাবাকে মারধোরের একটি অভিযোগ পেয়েছি। ধন মিয়ার দুই সংসার। তার দুই পরিবারই কোর্টে মামলা করেছে। বাবা যদি সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এইচএ