দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত এক সপ্তাহে ১৩১টি ট্রাকে করে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪১১ মেট্রিক টন ৩০০ কেজি। এবারের দুর্গাপূজায় ভারতে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মোট ২ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির কথা রয়েছে। ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে। তবে দেশে ইলিশ সংকট, বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি শেষ করা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। হাতে রয়েছে আর মাত্র ৫দিন। এই সময়ের মধ্যে বাকী ২ হাজার ৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা যাবে কি না তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে সংশয় রয়েছে।
এদিকে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে ক্ষুব্ধ যশোরসহ গোটা দেশের মানুষ। দেশের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১৮শ’ থেকে দু’হাজার টাকায় বিক্রি হলেও ভারতে রপ্তানি হচ্ছে ১২শ’ টাকায়। এটি কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
অবশ্য ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র বলেছে, প্রকৃতপক্ষে ওই দরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না। ইলিশ রপ্তানির খবরে বেনাপোলসহ আশপাশের এলাকার বাজারগুলোতে ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাগামহীন দাম বাড়ানোয় সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রসনাবিলাস বাঙালির জাতীয় মাছ ইলিশ। চড়া দামের কারণেই মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের অধিকাংশের পাতে এখনও ওঠেনি ইলিশ।
ইলিশ বিক্রেতারা জানান, ভারতে রপ্তানির কারণে ইলিশ মিলছে না আড়তগুলোতে, যা পাওয়া যাচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। ছোট ইলিশ ৫০০ থেকে হাজার টাকা ও বড় ইলিশ ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
অবশ্য ব্যবসায়ী একটি সূত্র বলেছে, প্রকৃত পক্ষে ওই দরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে না। তারা বেশি দামেই এ মাছ ভারতে পাঠাচ্ছেন। খাতা-কলমে দেখানো হচ্ছে ১০ ডলার বা ১২শ’ টাকা। আর সরকারি মূল্যের অতিরিক্ত টাকার লেনদেন চলছে গোপনে হুন্ডিতে। আর এ কাজটি দেশের বিভিন্ন হুন্ডি ব্যবসায়ী ও মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ বা ভারতে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে গোপনে এ কাজটি ব্যবসায়ীরা করে থাকেন বলে ওই সূত্রটি জানিয়েছে। এ কারণে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ভারতের বাজারে বাংলাদেশি ইলিশ প্রতি কেজি ভারতীয় ১৪শ’ থেকে ১৬শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।
যশোরের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ বলেছেন, ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি নিয়ে দেশে রীতিমত রাজনীতি চলে। বিগত দিনে বাংলাদেশ সরকারের একটি রেওয়াজ ছিল, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ মাছ রপ্তানি করা। দেশের পদ্মা ও মেঘনা নদীর ইলিশ ছাড়া তাদের এ উৎসবের পূর্ণতা পায় না। যদিও ২০১১ সাল থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতসহ বিশ্বের অন্য দেশে ইলিশ রপ্তানি। দাম নিয়ন্ত্রণ ও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ইলিশ সহজলভ্য করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সরকার।
অবশ্য ২০১৯ সাল থেকে পূজার সময় ভারতে উপহার স্বরূপ নির্দিষ্ট পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাংলাদেশ। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর দুর্গোৎসবে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করেছে। ২০২৩ সালে শেখ হাসিনা সরকার চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৪২ টন।
এইচএ