এইমাত্র
  • ভিসা কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে যা জানাল ভারত
  • চার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে গ্রেপ্তারের অনুমতি
  • ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত : ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী
  • হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহতের গুঞ্জন
  • এবার ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড়
  • শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, থাকবেন: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  • প্রতিটি শহীদ পরিবার পাবে ৩০ লাখ টাকা: মাহফুজ
  • আরও ৪টি কমিশন গঠন করেছে সরকার
  • হজ প্যাকেজ ৪ লাখ টাকা করার দাবি
  • বিশ্ব গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর
  • আজ শুক্রবার, ৩ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
    দেশজুড়ে

    কারাগারে যেভাবে দিন কাটছে সাবেক এমপি একরাম ও মোহাম্মদ আলীর

    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম
    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম

    কারাগারে যেভাবে দিন কাটছে সাবেক এমপি একরাম ও মোহাম্মদ আলীর

    শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম

    নোয়াখালীর দুই প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও মোহাম্মদ আলী নোয়াখালী জেলা কারাগারে একই ওয়ার্ডে (কক্ষে) দিন যাপন করছেন। তবে তারা একে অপরের সাথে কথা বলছেন না, এমনকি তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়েও দেখছেন না। সার্বক্ষণিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছেন দুই সাবেক সাংসদ।

    ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকাকালীন তারা বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলেও এখন তারা কারাগারের ছোট্ট এক কুঠুরিতে অস্বাভাবিক সাধারণ জীবন যাপন করছেন। দুর্নীতি দুঃশাসন ও হত্যার মতো অপরাধের মামলায় তারা আজ কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

    কারাগার জীবন একরামুল করিম চৌধুরীর জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। এর আগে কখনো তাকে কারাগারে যেতে হয়নি। প্রথমবারের মতো কারাগারে গিয়ে খুব অস্বস্তিতে দিন কাটছে তার। অভিযোগ করেছেন থাকার কক্ষে টয়লেটের দুর্গন্ধ আসার। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে তার এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছে যে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন কারাবন্দীদের জীবন-যাপনের মান উন্নয়নে কি কাজ করেছেন ? যদি সেই উন্নয়ন কাজগুলো করতেন তবে আজকে তো এখানে দুর্গন্ধ আসতো না।

    অপরদিকে আরেক নেতা নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ আলীকেও এর আগে কারাগারে যেতে হয়নি। প্রথম অভিজ্ঞতায় তিনিও বেশ অস্বস্তিতে দিন যাপন করছেন। আবার কারাগারের ভেতরে খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি। প্রশ্ন তুলছেন খাবারের দাম নিয়েও।

    জানা গেছে, এক সিঙ্গেল প্লেট করলা ভাজির মূল্য যখন ৬০ টাকা নেওয়া হয়েছিল তিনি তার প্রতিবাদ করে বলেছেন ৩০ টাকার করলা ভাজি কেন ৬০ টাকা নেয়া হলো। বাকি ৩০ টাকা কি মেরে দেয়া হলো ? কর্তব্যরত অফিসার জবাবে বলেছিলেন স্যার বাজারে করলার কেজি একশত টাকা সে হিসেবে দাম বাড়তি নিতে হয়। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ তিনি বলেন বাজারে করলার কেজি সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০টাকা হবে। সে হিসেবে প্রতি সিঙ্গেল প্লেট করলা ভাজি ৩০ টাকাই হবে এখানে বাকি ৩০ টাকা মেরে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মহলে প্রশ্ন উঠছে আসলে কি বাজারের খবর রেখেছিলেন সাবেক সাংসদেরা ?

    উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতন পরবর্তী ১২ আগস্ট হাতিয়া থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ নিজ বাড়ি থেকে মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে হাতিয়ার ৭ লক্ষ মানুষকে জিম্মি করে অনিয়ম দুর্নীতি দুঃশাসন ও লুটপাটের অভিযোগ এনে আন্দোলন করে তার বাড়ি ঘেরাও করে প্রশাসনকে খবর দেয় স্থানীয় ছাত্র-জনতা। আর সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে হাতিয়ার নৌ বাহিনী।

    তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ১ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন একরামুল করিম চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৩ সালে শ্রমিক দলের কর্মী মো. খোকনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা দায়ের করা হয়। ১ অক্টোবর গ্রেপ্তার পরবর্তী সেই থেকে তিনি এখনো কারাগারে রয়েছেন। এরই মধ্যে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন একরামুল করিম চৌধুরী।

    প্রসঙ্গত, বিগত দিনে হাসিনা সরকারের এই দুই প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্যের মাঝে নোয়াখালী জেলার রাজনীতি নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক কোন্দল বিরাজমান ছিল। তারা একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নোয়াখালী জেলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে। জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন একরামুল করিম চৌধুরী। আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে স্ত্রী-পুত্রকে বানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাগ্নেকে বানিয়েছেন পৌর মেয়রসহ বিশ্বস্ত আস্থাভাজন নেতাকর্মীদের বিভিন্ন উপজেলা পৌরসভা ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার বানিয়েছেন তার শাসনামলে। একইভাবে মোহাম্মদ আলীও আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে স্ত্রী-পুত্রকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাজনীতিতে। স্ত্রীকে বানিয়েছিলেন সংসদ সদস্য আর ছেলেকে বানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

    অপরদিকে এমপি একরামের কোন অধিপত্যকে তোয়াক্কাই করতেন না হাতিয়া০৬ আসনের আরেক প্রভাবশালী সাবেক সাংসদ (হাতিয়ার গডফাদার খ্যাত) মোহাম্মদ আলী, যে কারণে এমপি একরামের (সদর০৪) আসনে ব্যতিক্রম শুধু নোয়াখালী পৌরসভা নির্বাচন। দলীয় কোন্দলে রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের প্রার্থীর কাছে হারতে হয়েছে একরামুল করিম চৌধুরী সমর্থিত প্রার্থীকে। সেই থেকে কিছুদিন কোণঠাসাও থাকতে হয়েছে এমপি একরামুলকে। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে তিনি সেই কোনঠাসা অবস্থান কাটিয়ে রাজনীতির মাঠে ফিরেছেন দুর্দান্ত প্রতাপে। কিন্তু দুঃস্বপ্নের মত ৫ আগস্ট সরকার পতনের মধ্য দিয়ে ধুলোয় মিশে গেল তাদের দুঃশাসনের আধিপত্য। প্রকৃতির নিয়মেই কর্মফল প্রাপ্তির জন্য নিক্ষিপ্ত হল বন্দী কারাগারে।

    এদিকে নোয়াখালী জেলা কারাগারের জেল সুপার গোলাম দস্তগীর জানিয়েছেন, সাবেক এমপি একরামুল ও মোহাম্মদ আলী কারাগারে এখনো তারা সাধারণ হাজতিদের সাথে রয়েছেন। তবে তারা ভিআইপি হিসেবে ডিভিশন সুবিধার জন্য আদালতে আবেদন করলে, আবেদন মঞ্জুর হওয়া সাপেক্ষে তারা ভিআইপি হিসেবে ডিভিশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন। আর ডিভিশন সুবিধা প্রাপ্য হলে তাদের জন্য আলাদা কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হবে। সেই কক্ষে একটি খাট, একটি মশারি, আলাদা টয়লেট, একটি চেয়ার, একটি টেবিল ও প্রতিদিন তাদের চাহিদা মোতাবেক একটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন।

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…