ভোরের সূর্য ওঠার আগেই ফুটে আছে সারি সারি সাদা শাপলা। ঝিরিঝিরি বাতাশে দুলছে ফুলগুলো। সাদা বকের আনাগোনা, পাখির কিচির মিচির শব্দ, স্বচ্ছ টলমল পানিতে ভাসছে অসংখ্য সাদা শাপলা। প্রকৃতিতে এমনি সৌন্দর্য চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ঢেমশা ইউনিয়নের কলেজ রোড এলাকায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতকানিয়া রেল স্টেশনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে কলেজ রোড সংলগ্ন বিলে ফুটেছে অসংখ্য সাদা শাপলা। সারিবদ্ধভাবে ফুটেছে ফুল। সকালে জলাশয়ের দিকে চোখ পড়ার পরে শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ফুটে থাকা সারি সারি শাপলা ফুল দেখতে যেমন বৈচিত্র্যময় তেমনি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলীর একটি। শাপলা শুধু শাপলা ফুলই নয় এটি জাতীয় ফুল।
মূলত বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল ও নিচু জায়গায় পানি জমে থাকলে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় জাতীয় ফুল শাপলা। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল, জলাশয় এবং নিচু জমিতে বিপুল পরিমানে শাপলা জন্মাত। বর্ষাকাল থেকে শুরু করে শরৎকালের শেষ পর্যন্ত এ শাপলা দেখা যেত। মানুষের খাদ্য তালিকায় সবজি হিসেবেও যুক্ত ছিল শাপলা। কয়েক বছর আগে বর্ষা এবং শরৎকালে খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত গোলাপি ও সাদা রঙের শাপলা ফুল।
সাধারণত বিভিন্ন বিল-ঝিলে কিংবা পুকুরে এর দেখা মেলে। গ্রাম ও শহুরে মানুষের কাছে এটি সবজি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। অনেকে আবার শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এক দশক আগেও উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর শাপলা ফুল দেখা মিলত। তখন পুকুর খাল বিল ও জলাশয়গুলোতে লাল, গোলাপি, সাদা, বেগুনি, নীল ও বিরল প্রজাতির হলুদ শাপলা ফোঁটার কারণে চারিদিকে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে্য প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিণত হতো।
সাধারণত শাপলা ফুল দিনের বেলা ফোঁটে এবং সরাসরি কাণ্ড ও মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। শাপলার পাতা আর ফুলের কাণ্ড বা ডাটি বা পুষ্পদণ্ড পানির নিচে মূলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এই মূল যুক্ত থাকে মাটির সঙ্গে এবং পাতা পানির উপর ভেসে থাকে। মূল থেকেই নতুন পাতার জন্ম হয়। পাতাগুলো গোল এবং সবুজ রঙের হয়। কিন্তু নিচের দিকে কালো রং। ভাসমান পাতাগুলোর চারিদিক ধারালো হয়।
বর্তমানে সাদা প্রজাতির শাপলা বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না গোলাপি, বেগুনি, নীল ও হলুদ শাপলা। এসব শাপলা কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়।
জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে খাল বিল ও জলাশয় থেকে শাপলা হারিয়ে যেতে বসেছে। শাপলা ফুল সাধারণত গোলাপি ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। লাল ও সাদা রঙের শাপলা বেশ পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। এতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম রয়েছে। শাপলার ভেষজ গুণও কম নয়। তবে লাল রঙের শাপলা ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই শাপলা চুলকানি ও আমাশয় রোগের জন্য বেশ উপকারী। শাপলা ফুলের ফল দিয়ে সুস্বাদু খই ভাজা যায়। খাল—বিল ও জলাশয়ের পানি যখন কমে যায় তখন শাপলার শালুক তুলে খাওয়া যায়।
এমআর