এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। এ ছাড়া ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এবং চৌধুরী জাফরুল্লাহ সরাফাতের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ৫ দিনের মধ্যে লেনদেন, হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসিসহ যাবতীয় তথ্য পাঠাতে হবে।
গতকাল সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়ে হিসাবের তথ্য তলব করেছে।
মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বিএফআইইউর চিঠিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের হিসাবে কোথা থেকে কীভাবে টাকা এসেছে, তা জানাতে বলা হয়েছে। সেই অর্থ পরবর্তী সময়ে কোথায় খরচ হয়েছে, নগদে উত্তোলন হয়েছে কি না, এসব বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে এই ট্রাস্টের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা। তার বোন শেখ রেহানা অন্যতম ট্রাস্টি। এ ছাড়া অন্য যারা এই ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত কিংবা যেসব হিসাবে ট্রাস্ট থেকে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, জমা হয়েছে, তাদের তথ্যও দিতে বলা হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের চিঠিতে তলব করা ব্যক্তির নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, হিসাব তলব করা ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী ইত্যাদি চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রায় সাড়ে ৫শ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এসব হিসাবে জমা আছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ তালিকায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সন্তান ও পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম থাকলেও প্রথমবারের মতো তাদের দুই বোনের হিসাবে তথ্য চাওয়া হলো।
ব্যাংকে পাঠানো বিএফআইইউর অন্য এক চিঠিতে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা ও ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ সরাফাত, তাঁর ভাই চৌধুরী হাবিবুল্লাহ সরাফাত এবং তাদের মা ডালিয়া চৌধুরীর হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর আগে তাদের আরেক ভাই ও পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে বিএফআইইউ। তাদের পরিবার শেখ হাসিনা পরিবারের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে হিসাব তলব করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে।
সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বিএফআইইউ। আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং সিআরআই-ইয়ং বাংলা প্রজেক্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের তালিকায় শেখ পরিবারে আরও আছেন শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরিবারের ৭ জন, চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের পরিবারের ৯ জন, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পরিবারের ৫ জন এবং শেখ হেলাল উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী রূপা চৌধুরী ও ছেলে শেখ তন্ময়।
অবৈধ সম্পদ অর্জন, রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ পাচারে সন্দেহভাজন ১০ প্রভাবশালীর দেশি-বিদেশি সম্পদ অনুসন্ধানে গত সপ্তাহে ১২টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। দুদক, সিআইডি ও এনবিআরের সমন্বয়ে গঠিত ১০টি টিম এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সার্বিকভাবে তাদের কার্যক্রম সমন্বয় করবে বিএফআইইউ। আইনি সহায়তা দেবে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। মূলত কারও অর্থ পাচারের প্রমাণ পেলে যেন দ্রুত সে অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া যায়, সে জন্যই এই পাঁচটি সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে। তদন্তের আওতায় আনা প্রভাবশালীদের তালিকায় পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার পরিবার এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপ রয়েছে।
এরই মধ্যে এসব ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত হিসাব ফ্রিজ করেছে বিএফআইইউ। শেখ হাসিনা পরিবারের বাইরে যৌথ তদন্তের আওতায় আনা ব্যবসায়ী গ্রুপ হলো– এস আলম, বেক্সিমকো, সামিট, সিকদার, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, নাসা, জেমকন ও নাবিল গ্রুপ। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরিবার ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পরিবারের বিষয়ে বিশদ তদন্ত করা হবে। এসব ব্যক্তি ও গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কোথায় কী সম্পদ আছে, তা বের করা যৌথ তদন্তের মূল লক্ষ্য। একই সঙ্গে দ্রুত কীভাবে অর্থ ফেরত আনা যায়, তা নিয়েও তারা কাজ করবে।
এবি