সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অভয়াশ্রমে নিরাপদে নেই মাছ। প্রতিদিন নিধন হচ্ছে মা মাছ। উল্লাপাড়ার করতোয়া নদীতে ঘাটিনা রেল ও সড়ক সেতুর মাঝে প্রায় ৫০০ মিটার অংশে মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করেছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। নির্দিষ্ট এলাকায় অসংখ্য লাল পতাকা দেওয়া হয়েছে। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত নদীর এ অংশটুকু সংরক্ষিত। এর গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট। অথচ অভয়াশ্রমে নির্বিচারে মারা হচ্ছে মা মাছ। স্থানীয় লোকজন নৌকায় করে অভয়াশ্রমের নির্দিষ্ট এলাকায় বড়শি ফেলে বোয়াল, রুই, চিতল, কালবাউশ, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
রেড জোন অংশে মাছের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অসংখ্য কঞ্চিসহ বাঁশ পোঁতা হয়েছে। সেখানে ফেলা হয়েছে তেঁতুল গাছের ডাল, যাতে মা মাছ নিরাপদে ডিম দিয়ে প্রজনন বৃদ্ধি করতে পারে। পাশে একটি সাইনবোর্ডও বসানো হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে– মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু অসাধু শিকারিরা নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে মাছ ধরছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা তেমন কাজে আসছে না।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক নূর উন নবীর ভাষ্য, কিছু মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। তারা নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে। মৎস্য বিভাগ লাখ লাখ টাকা খরচ করে এ জনপদের মানুষের জন্য মৎস্য প্রজননের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু লোভী শিকারিরা প্রকাশ্যে কিংবা রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ছিপ ফেলে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এদের রোধ করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দেড় যুগ আগে এ নদীতে মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করেছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। প্রতিবছর এখানে লম্বা কঞ্চিওয়ালা বাঁশ পোঁতা হয়। ফেলা হয় তেঁতুল গাছের ডাল। এখানে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু শিকারি দিনে ও রাতে সুযোগ বুঝে নৌকা নিয়ে নিষিদ্ধ এলাকায় নানা প্রজাতির বড় মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগ মাসে কয়েকবার অভিযান চালালেও তারা খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। এলাকার লোকজন ডেকে মাছ শিকার বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কিছুই মানছে না।
গত শুক্রবার সরেজমিন দেখা যায়, তিনটি ডিঙি নৌকায় করে কয়েকজন অভয়াশ্রমে বড়শি ফেলে মাছ ধরছে। নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ধরার কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিকারি বলেন, ‘মাছ ধরা অপরাধ আমরা জানি। তারপরও কাঁচা মাছের লোভ সামলানো খুব কঠিন। সে কারণে মাঝেমধ্যে আমরা বড়শি ফেলে দু-একটি মাছ ধরি।
মৎস্য বিভাগ বলছে, অনেক অর্থ ব্যয় করে অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। এখানে বোয়াল, রুই, চিতল, কালবাউশ, আইড়, বাইমসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব ডিম দিয়ে প্রজনন বৃদ্ধি করে। কিন্তু অসাধু মৎস্য শিকারিদের থামানো যাচ্ছে না।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় অনেকবার অভিযান চালিয়ে অসাধু শিকারিদের ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। কোনোভাবেই তাদের থামানো সম্ভব হচ্ছে না। মৎস্য বিভাগের লোকবল কম। তারপরও প্রয়োজনে বারবার অভিযান চালানো হচ্ছে।
এইচএ