এখন ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের সকালে উষ্ণতা ছড়ানো বিছানায় এক ধরনের আলসেমি ভাব ও জড়তা শরীর ও মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। গরম কাপড়ের উষ্ণতা আরামদায়ক বিছানায় কাঁথার মুড়িয়ে শীতের এই সময় বেশ উপভোগ্য। মন কিছুতেই বিছানা ছাড়তে চায় না। কিন্তু খেজুর রসের স্বাদ ও নেশার টানে কুয়াশার চাঁদর সরিয়ে মনের অজান্তে উঁকি দেয় মিষ্টি রসের লোভ।

শীতের হিম জড়ানো ভোরে খেজুর রসের কথা নূন্যতম এভাবেই বলতে হয়। গাছ থেকে সদ্য পাড়া এক গ্লাস টাটকা রসে যেনো জমে ওঠে শীতের আমেজ। শুধু কি তাই ? গাছিদের ব্যস্ততায় গল্পটাও রঙ বদলায়। টাটকা রসের স্বাদ পেতে প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোরবেলা খেজুর রস খাওয়ার জন্য দূর দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই ভিড় করছেন রসপ্রেমীরা।

ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে খেজুরের রস সংগ্রহের আয়োজন চোখে পড়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, কটিয়াদীসহ বিভিন্ন স্থানে৷ এছাড়াও পাশ্ববর্তী গফরগাঁও উপজেলার পাগলাসহ একাধিক স্থানে খেজুর রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এখানকার খেজুর রসের খবর ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলাজুড়ে। ফলে প্রতিদিন ভোর থেকে গাছে ঝুলে থাকা রসের কলসগুলো নামিয়ে আনেন গাছিরা। এ সময় নিচে অপেক্ষা করেন টাটকা রসের স্বাদ নিতে আসা নানা বয়সী লোকজন। খেজুরের রস শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে।

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার শিমূলকান্দী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে কাঁচা রসের স্বাদ নিতে ভোররাত থেকে বি‌ভিন্ন যানবাহনে করে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন রস‌প্রেমীরা।কাঁপা কাঁপা ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থাকেন গাছের নিচে। কেউ বোতলে করে রস নিয়ে যান বাড়িতে। আবার কেউ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে রস পান করেন আনন্দের সাথে। প্রতি গ্লাস রস ৫০ টাকায়, আবার এক কেজি রসের দাম ২০০ টাকায় বিক্রি করেন। এবার খেজুঁর রসের দাম দ্বিগুণ কোনো কোনে স্থানে তিন গুণ দামে রস বিক্রি হওয়ায় দাম নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রস পিপাসুরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বছর প্রতি গ্লাস বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায় এখন প্রতি গ্লাস ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবছর ৮০ টাকা লিটার এখন ২০০ টাকা লিটার। দাম নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো প্রকার নজরদারি ও তদারকি না থাকায় রস ব্যবসার সাথে জড়িতরা নিজেদের ইচ্ছে মতো অগ্নিমূল্যে রস বিক্রি করছে।

রসের স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষ জানান, অনেক দূর থেকে কুয়াশা বেধ করে তাজা রসের স্বাদ নিতে ছুটে এসেছেন তারা। দল বেঁধে টাকটা রস পান করতে আসা যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে অতিদূর থেকে এসেও অনেকে পাননি রসের স্বাদ। চাহিদা বেশি থাকায় ভোরের আলো ফোটার আগেই রস শেষ হয়ে যায়। তবে গত বছর প্রতি কেজি খেজুরের রস ৮০ টাকায় কিনেছি। কিন্তু এ বছর সেই রস কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকায়।’

গাছিরা বলছেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ রস সংগ্রহ হচ্ছে, তা দিয়ে চাহিদা মেটাতে পারছেন না তারা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় অনেক দূর থেকে অতিথিরা আসেন রস খেতে। সে তুলনায় গাছের সংখ্যা কম। গত ছয় বছর আগেও প্রায় ৭'শ খেজুরগাছ ছিল। এখন তা হাতে গনা কয়টি গাছ। ফলে খেজুরের রসের দাম বেড়ে গেছে। খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানো গেলে চাহিদা মেটানো সহজ হতো।

শিমূলকান্দী গ্রামে প্রায় ২৫টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা। অন্যদিকে পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দি ও হোসেন্দি ইউনিয়নে ছোট-বড় ৮৫টি গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কেজি খেজুর রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদিকে খেজুরের রসকে নিরাপদ করার জন্য গাছের রস পড়ার জায়গাটি জাল দিয়ে ঢেকে রাখাও হয়েছে।

এইচএ