চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় প্রশাসনের অভিযানের পরও থামানো যাচ্ছে না ফসলি জমির মাটি কাটা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি উর্বর জমির টপসয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি) খননযন্ত্র দিয়ে কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি ব্যবসায়ীরা। আর্থিকভাবে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোররাত ৪টা পর্যন্ত উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনি এলাকায় কৃষি জমির টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। তবে ম্যাজিস্ট্রেট দেখে স্কেভেটর রেখে পালিয়ে যান মাটি কাটার সাথে জড়িত লোকজন।
এসময় ঘটনাস্থল থেকে দুটি স্কেভেটর আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে মাটি কাটার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা করার জন্য নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ) মিল্টন বিশ্বাস।
এর আগে, গত ৬ জানুয়ারি রাতে উপজেলার এওচিয়া ও কাঞ্চনা ইউনিয়নে কৃষি জমির টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। এসময় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি টের পেয়ে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি স্কেভেটর আটক করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের এতো অভিযানের পরও এখনো বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যা নামতেই মাটি কাটার তৎপরতা শুরু হয়। রাত গভীর হলেই স্কেভেটর দিয়ে শুরু হয় মাটি কাটা। ফসলি জমির মাটি কেটে তা ইটভাটায় পাচার করা হচ্ছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিস, থানা যাতায়াতের বিভিন্ন সড়ক—মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাটি কারবারিরা সোর্স লাগিয়ে রেখেছে। তাদের কাজ হচ্ছে প্রশাসনের গতিবিধির ওপর নজরদারির মাধ্যমে অভিযানের আগাম তথ্য জানিয়ে দেওয়া।
জানা যায়, উপজেলার সবচেয়ে বেশি ইটভাটা গড়ে উঠেছে উত্তর ঢেমশা, দক্ষিণ ঢেমশা, তেমুহনী, রসুলাবাদ ও দক্ষিণ ছদাহা এলাকায়। সাতকানিয়ার পশ্চিমে বাঁশখালী সীমান্ত এলাকায় পাহাড় ঘেঁষে এওচিয়া ছুড়ামনি ও ছনখোলা এলাকায় পাহাড়ের পাশে রয়েছে ১০—১২টি ইটভাটা। প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি কেটে এসব ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম—কক্সবাজার মহাসড়কের নির্মাণাধীন রেললাইন ঘেঁষে উত্তর ঢেমশা ও তেমুহনী মৌজায় আওয়ামী শাসনামলে তাদের দলীয় লোকজন গত কয়েক বছর ধরে শত শত হেক্টর ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে এক সময়ের ফসলি জমি এখন বিশাল লেকে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নানা স্থাপনার কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে আসছে। তার উপর এখন যেভাবে টপসয়েল কাটার হিড়িক চলছে। তাতে উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নেওয়ার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে কৃষি জমির টপসয়েল কাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এইচএ