পহেলা ফাল্গুন ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে উঠেছে ফুলের দোকানগুলো। ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসকে রাঙাতে কতই না আয়োজন, যার মূল অনুষঙ্গ রং-বেরঙের ফুল। বসন্ত বরণে আনন্দে মাতবে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষ। সব আবেদন, অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশের বড় মাধ্যম ফুল, বাসন্তী রঙের শাড়িতে সাজবে তরুণীরা মাথায় গুঁজবে বাহারি ফুল।
প্রতিবছর দেশে ফুলের চাহিদা বাড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এই সময়টাতে ব্যাপক চাহিদা থাকে বিভিন্ন উৎসবের কারণে। বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী, ফুলের ভরা মৌসুমে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিন দিবসে বাজার ধরে ব্যস্ত সময় পার করছে ফুল ব্যবসায়ীরা।
এ সময়ে সারা দেশে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়।
সেই সুবাদে কিশোরগঞ্জের ভৈরবেও জমে উঠেছে ফুল বেচাকেনা বিভিন্ন ফুলে দোকানও নার্সারিতে সাজিয়ে রেখেছে বাহারি ফুলের সাঁজ। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়ে সাজিয়ে বসেছে বাহারি ফুলের সাজঘর। এ যেন ঢাকার বাহিরে আরেকটি শাহবাগ মোড়। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এছাড়া বছরজুড়ে বিশেষ করে জম্মদিন, বিয়ে, বিভিন্ন সামাজিক -সাংস্কৃতিক ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বছর জুড়েই ফুল বাণিজ্য চলে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর গড়ে ২০শতাংশ হারে দেশে ফুল উৎপাদন বাড়ছে। এছাড়া দেশে অনেক ফুল চাষ করা যায় তবে অর্কিড ফুলসহ বেশ কিছু ফুল দেশে চাষ হচ্ছে না ফলে এ ধরনের ফুল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
ভৈরব উপজেলার গোছামারা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠভর্তি বাগানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ফুল। সেই ফুলের বাগানে পরিচর্যা করছেন চাষীরা। ফুলচাষি রাজু মিয়া, জাকির মিয়া বলেন, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা থাকে বেশি। সেই চাহিদা মেটাতে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়। বাজার ধরার জন্য ফুল গাছের পরিচর্যা করছি। ফুল যেন ভালো থাকে এ জন্য কাজ করছি।
ফুল বাগানের মালিক ময়না বলেন, সারা বছরই আমরা ফুল বিক্রি করে থাকি। তবে প্রতিবছর বিশেষ দিনগুলোতে ফুলে অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। আমরা আমাদের বাগান থেকে নিজেদের দোকানের চাহিদা মিটিয়ে যারা মৌসুমি ব্যবসায়ী বা এই বিশেষ দিন গুলোতে অস্থায়ী দোকান নিয়ে বসে তাদের কাছে ও ফুল বিক্রি করি। ফুলের দাম ও ভালো পাচ্ছি।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সড়কে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর মোড়ে, কমলপুর নিউটাউন, বাসস্ট্যান্ডের কলেজ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ফুলের দোকানে সাজিয়ে রয়েছে বাহারি রঙের ফুল।
ফুল বাগানের মালিক মো. দুলাল মিয়া বলেন, ৩২ বছর যাবৎ আমি ফুলের ব্যবসা করে আসছি। প্রথমে ঢাকা সাভার ছিলাম ভৈরবে ব্যবসা শুরু করি ২৩ বছর হয়। আমাদের ফুল ব্যবসায়ীদের সারা বছরের আয়ের একটা বৃহৎ অংশ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আসে। এই বছর আমাদের ব্যবসাও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আছে। বছরের অন্য সময় এত পরিমাণ ফুল বিক্রি হয় না। তাই ভরা মৌসুমে যা আয় হবে তা দিয়েই সারা বছর চলা যাবে। খরচ বাদ দিয়ে এর তিন ভাগের একভাগ মুনাফা থাকবে। ফুল বেশি দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের বেশি দামে ফুল কিনে আনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার বিদেশি ফুল আমদানিতে খরচ বেশি হচ্ছে। সে কারণে ফুলের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে। তবে ফেব্রুয়ারির বিশেষ দিবসগুলোতে ক্রেতারাও এই দাম নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন না।
ভৈরবে বিভিন্ন ফুলের দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৪০-৫০টাকা, গোলাপ ও রজনিগন্ধা কাগজে মোড়াতে লাগছে ১০০-১৫০টাকা, অন্য রঙের গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০টাকা, রঙিন গ্লাডিওলাস ৬০-৭০টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ৪০-৫০টাকা, গাঁদা ৫০ টাকা ১শ, ফুলের তোড়া নরমাল সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকা থেকে ১হাজার টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ২০০ টাকা। এর মধ্যে তরুণদের পছন্দের শীর্ষে লাল গোলাপ ও জারবেরা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এমআর-২