ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। আর এই আনন্দকেই প্রিয়জনের সাথে ভাগাভাগি করতে ঝুকি নিয়েও গ্রামের বাড়িতে ছুটে চলে মানুষ। এতে যানবাহনের চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুন। এই ফাকে মহাসড়কে বেরিয়ে আসে লক্কর ঝক্কর মুড়ির টিনের আদলে তৈরি গণপরিবহন। এসব গাড়ি সড়কে বিকল হয়ে যানজট তৈরি করে। ঠিক তখনি ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষের। আর এসব গাড়ি ঈদের আগে রং মেখেই হয়ে যায় আকর্ষনীয় চকচকে নতুন গাড়ি।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে টাঙ্গাইলে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাড়ি মেরামত করার কারিগররা। পুরাতন গাড়িগুলোকে নতুন রূপ দিতে মেকানিক ও রঞ্জন শিল্পীদের ওয়ার্কশপে চলছে সাজসজ্জার কাজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের পলিটেকনিক থেকে শুরু করে এলজিইডির মোড় পর্যন্ত অবস্থিত একাধিক গাড়ি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানে চলছে মেরামতের এক মহাযজ্ঞ। কেউ রং নিয়ে ব্যাস্ত, কেউবা ভাঙ্গা অংশে জোরা লাগাতে ব্যাস্ত। এছাড়াও গাড়ির ইঞ্জিন এবং ইলেক্ট্রিকের কাজও করছেন তারা। আর এই সুযোগে নিজেকে রাঙ্গিয়ে নেয় ফিটনেসবিহীন লক্কর ঝক্কর গাড়ি।
এদিকে ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে এক ভোগান্তির নাম হয়ে থাকে। প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষের চাপে গণপরিবহনের চরম শঙ্কট দেখা দেয়। অনেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে খোলা ট্রাকে উঠে পাড়িজমান প্রিয় জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। আর এই সুযোগেই সুবিধাবাদী গাড়ির মালিকরা তাদের ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে নামিয়ে দেয়। আর সেই গাড়ি এসে বিকল হয় কোন মহাসড়কে। আর এতে বিপত্তি বাধে নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা মানুষের। বিষাদের ছায়া নেমে আসে তাদের মনে। অনেকে বছরে মাত্র দুটি ঈদে সাধারনত পরিবারের সাথে সময় কাটাতে তাদের পিত্রালয়ে যান। আর সেখানে পৌছাঁতে তাদের ভোগান্তি এই ফিটনেস বিহীন গাড়ি। প্রতিবছরই ঘর মুখো মানুষের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরায় মহাসড়কে দিনরাত নিরলস ভাবে কাজ করে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ার হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, সর্বোচ্চ মহল থেকেই একটা নির্দেশনা থাকে এবং মালিক, শ্রমিক অফিসেও চিঠি দেয়া হয় যেন ফিটনেসবিহীন কোন গাড়ি সড়কে না আসে। তবুও কিছু অসাধু মহল ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে, যখন আমরা খুবই ব্যাস্ত থাকি, ঐ সময় আমরা কোন গাড়ি ধরে যে বিধিমোতাবেক ব্যাবস্থা গ্রহন করব সেই সময়টুকুও আমাদের নেই, ঠিক সেই সময় অসাধু শ্রমিক ও মালিকরা তাদের ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে নামিয়ে দেয়। তারা এটা জানে যে এই সময় আমরা পচন্ড ব্যাস্ত। আমরা যানযট নিরসনে ব্যাস্ত থাকি বলে তখন মামলা দিতে পারি না। আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। যখন সাধারন মানুষ সচেতন হবে, যে আমরা লক্কর ঝক্কর গাড়িতে উঠবো না ঠিক তখনই এটার সমাধান আসবে। নয়তো গুটি কয়েক সার্জেন্ট বা কয়েকজন অফিসার মামলা দিয়ে সমাধান করা যাবে না।
একাধিক গাড়ির মালিক জানান, ঈদের আগে গাড়ি নতুন করে রঙ করালে তা দেখতে আকর্ষণীয় লাগে, পাশাপাশি পুরাতন গাড়ির মূল্যও কিছুটা বেড়ে যায়। সেই সাথে ঈদ যাত্রায় যেন গাড়ি নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। টুকটাক কাজ থাকলে সেগুলোও এই সময়েই করে নেই। গাড়ির ফিটনেস না থাকলে রাস্তায় গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আমরা চাই না ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে আসুক। প্রশাসনের কাছে আবেদন কোন ভাবেই যেন ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় না আসে। এতে আমাদেরও ভোগান্তি সেই সাথে যাত্রীদেরও ভোগান্তি। এছাড়াও রয়েছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। ভোগান্তির আরেক নাম সিএনজি। যত্রতত্রই এদের বিচরন। নিয়ম শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়া চলাফেরায় দূর্ঘটনা সৃষ্টি হয়। যার ফলে যানযটের সৃষ্টি হয়। যানযটে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় বয়স্ক এবং বাচ্চাদের।
অন্যদিকে, মেকানিক ও রংমিস্ত্রিরা বলছেন, ঈদের মৌসুমে তারা গাড়ির ইঞ্জিন, রং, লাইটিং ইত্যাদির কাজ করে থাকে যেন চলতি পথে গাড়ি কোন প্রকার বিকল না হয়। ঈদ মৌসুমে কাজের চাপ থাকলেও এইবার যেন তাদের খরা যাচ্ছে। তেমন কাজ নেই।
ইঞ্জিন মিস্ত্রী রনি বলেন, ঈদের সামনে ক্লাচ প্লেট, গিয়ার, ইঞ্জিনওয়েল, চাকা, মোটকথা একটা সার্ভিসিং করে দেই। কিন্তু তুলনামূলকভাবে এবার আমাদের কাজ নেই। রমজান মাসে অধিকাংশ গাড়ি বসা। রাস্তায় যাত্রী নেই। ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু আয় করার আশায় মালিকরা গাড়ি সার্ভিসিং করে নিচ্ছে।
গাড়ির বডি মিস্ত্রী মফিজ বলেন, ফিটনেসের বিষয়টা অফিস বুঝবে। আমরা সাধারনত গাড়ির মেরামত করি। আমাদের কাজ আসলে কাজ করি। মালিকরা চায় গাড়ি ঝকঝকে থাকুক তাই আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি।
বডি মিস্ত্রি জাবেদ বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৮টি গাড়ির কাজ করেছি। এর মধ্যে নতুন গাড়িও আছে। ঈদের আগেই আমাদের এগুলোর কাজ শেষ করতে হবে। সেই কারণে আমরা একটু ব্যাস্ত সময় পার করছি।
ফিটনেস বিহীন গাড়ির কাজ করেন কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফিটনেস বিহীন গাড়ির কাজও করতে হয়। না হলে অফিস থেকে ফিটনেস দেয় না।
কেউ পুরাতন রঙ উঠিয়ে নতুন করে কাজ করছেন, কেউ বা গাড়ির ছোটখাটো ডেন্ট সারিয়ে নিচ্ছেন। বিশেষ করে বাস, প্রাইভেট কার ও সিএনজিগুলোতে রঙের কাজ বেশি চলছে।
গাড়ির রং ও সংস্কার কাজের এই ব্যস্ততা আরও কয়েকদিন চলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঈদের আগে শেষ মুহূর্তে সবাই চান তাঁদের বাহনকে নতুন রূপে সাজিয়ে নিতে, আর তাই কর্মশালাগুলোতে এখন উৎসবের আমেজ।
টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে বলেন, টাঙ্গাইলের ৯৮ শতাংশ গাড়ির ফিটনেস রয়েছে। বাকি ২ শতাংশ নেই। তবে আমি তাদেরও নিরুৎসাহিত করি। ফিটনেস বিহীন গাড়ি সড়কে চালানোর কোন সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল বিআরটিএর সহকারি পরিচালক শেখ মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঈদ যাত্রায় সড়কে কোন লক্কর ঝক্কর গাড়ি চলতে পারবে না। সে ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। এটি বন্ধে সড়কে ভ্রাম্যমান পরিচালনাসহ কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।
এআই