এইমাত্র
  • ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে ১ চুক্তি ও ৮ সমঝোতা স্মারক সই
  • নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে সরকার: রিজভী
  • হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন তামিম
  • ব্যাংককে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়ল ভবন
  • মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, অনুভূত বাংলাদেশেও
  • রাশমিকার সংলাপ বলার ধরন নিয়ে আপত্তি নেটিজেনদের
  • বালুবাহী ট্রাক উল্টে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৫ কিলোমিটার যানজট
  • ঈদে ফিরতি যাত্রার ৭ এপ্রিলের টিকিট মিলছে আজ
  • ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীর ঢল, বেড়েছে গাড়ির চাপও
  • ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
  • আজ শুক্রবার, ১৪ চৈত্র, ১৪৩১ | ২৮ মার্চ, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সিডিএর ড্রাইভার মহিউদ্দিন, ঘুষের টাকায় বিলিয়নীয়ার!

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৬ এএম
    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

    সিডিএর ড্রাইভার মহিউদ্দিন, ঘুষের টাকায় বিলিয়নীয়ার!

    গাজী গোফরান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (চট্টগ্রাম) প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

    চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত-সমালোচিত একটি প্রতিষ্ঠান। তবে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিডিএর একজন সাধারণ গাড়িচালক, মহিউদ্দিন, অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা তার আয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ বেমানান। তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধার অপব্যবহার করে, ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাধিক সম্পদ গড়ে তুলেছেন। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কীভাবে একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারী এত সম্পদের মালিক হলেন, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে।

    সিডিএর সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার শপিং মহলের তৃতীয় তলায় মহিউদ্দিন তার স্ত্রী লাকী আক্তারের নামে ২৫/বি নম্বর দোকান ক্রয় করেছেন। এই দোকানটির ক্রয়মূল্য ছিল ২৬,৩১,৪৪৭/- (ছাব্বিশ লক্ষ একত্রিশ হাজার চারশ সাতচল্লিশ) টাকা। একজন গাড়িচালকের বৈধ উপার্জন থেকে এত বড় বিনিয়োগ করা কীভাবে সম্ভব, সেটি এখন টক অফ দ্য সিটি।

    স্ত্রী লাকী আক্তারসহ অন্যান্য সহোদরদের নামে ফিরিঙ্গীবাজার মৌজায় জমি ক্রয় করেছেন ড্রাইভার মহিউদ্দিন। এরপর সিডিএ থেকে বি.সি. কেইস নং-৭৮৯/০২/২০২১-২০২২ মূলে ৬ তলা ইমারত নির্মাণের অনুমোদন নিয়েছেন।

    মহিউদ্দিন নিজের ভাইয়ের নামে সিডিএ অফিস ভবনের নিচতলায় চউক কো-অপারেটিভ থেকে একটি দোকান বরাদ্দ নেন। যদিও এটি তার ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, তবে প্রকৃত মালিক মহিউদ্দিন নিজেই।

    তাছাড়া ড্রাইভার মহিউদ্দিন স্ত্রী লাকী আক্তারের নামে চউক পূবালী ব্যাংক শাখায় বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনেছেন, যা তার স্বল্প বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

    কর্মচারী কোটায় পাওয়া সিডিএর 'অনন্যা আবাসিক' এলাকায় একটি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন মহিউদ্দিন। তবে প্লটটি দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও, মহিউদ্দিন দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা ব্যবহার করে এককালীন পরিশোধ করেছেন এবং প্লটটির রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেছেন।

    দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে মহিউদ্দিন নিজে হজ পালন করেছেন, এমনকি তার পিতাকেও হজ করিয়েছেন। এছাড়াও, স্ত্রীর চিকিৎসার অজুহাতে এবং পারিবারিক বিনোদনের জন্য বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

    সিডিএ কর্তৃপক্ষ নির্বাহী প্রকৌশলী আ. হ. ম. মিছবাহ উদ্দিনের জন্য চট্টমেট্টো-ঘ-১১-১২৯৬ সিরিয়ালের পাজেরো জিপ গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে। এই গাড়িটি প্রকৌশলীর অফিস যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করার কথা থাকলেও, ড্রাইভার মহিউদ্দিন এটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন।

    অভিযোগ রয়েছে, মহিউদ্দিন নির্বাহী প্রকৌশলী মিছবাহ উদ্দিনকে অফিসে নামিয়ে দেওয়ার পর গাড়িটি নিজের কাজে ব্যবহার করেন। তিনি এই গাড়ির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূত ইমারত প্ল্যান অনুমোদনের জন্য মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন। অনেকেই প্রকৌশলীর গাড়ি দেখে ভেবে নেন, এটি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছে, ফলে ঘুষ দিতে তারা দ্বিধাবোধ করেন না।

    সরকারি গাড়ির জন্য বরাদ্দকৃত জ্বালানি তেল ব্যবহার করা হয় মহিউদ্দিনের পারিবারিক কাজে। গাড়িটি ব্যবহার করা হয়—স্ত্রী ও সন্তানদের ড্রাইভিং শেখানোর কাজে, স্ত্রীর বাপের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য, পারিবারিক অনুষ্ঠান ও বেড়ানোর কাজে, এবং বেআইনি নকশা অনুমোদনের সাইট ভিজিটে।

    আরও অভিযোগ রয়েছে, ড্রাইভার মহিউদ্দিন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ হয়ে নিউমার্কেট, চকবাজার এবং বহদ্দারহাট এলাকায় জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছেন ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে। এই অভিযোগে তার নামে কোতোয়ালী, চকবাজার, চান্দগাঁওসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

    সিডিএর কয়েকজন কর্মকর্তা এবং কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, ড্রাইভার মহিউদ্দিন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভূমি ছাড়পত্র, নকশা অনুমোদন এবং প্লট অধিগ্রহণ করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।

    বিশেষ করে সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং এম. জহিরুল আলম দোভাষের সময় আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তিনি কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন। তার এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পেছনে হাত ছিল বোর্ড মেম্বার এবং সিডিএর একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তার। তবে মহিউদ্দিনকে রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার পেছনে ছিল চট্টগ্রাম মহানগরের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের একাধিক দাপুটে নেতা। মোটা অংকের ঘুষের টাকার একটি অংশ চলে যেত সেসব নেতাদের পকেটে।

    তারা আরও জানান, মহিউদ্দিন এবং তার শ্বশুর পরিবার ছিল নিম্নবিত্ত। কিন্তু অবৈধভাবে টাকা ইনকাম করে আজ ড্রাইভার মহিউদ্দিন শতকোটি টাকার মালিক।

    আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ির এই ধরনের অপব্যবহার শুধু সরকারের অর্থ অপচয়ই নয়, বরং এটি আইনত অপরাধ।

    এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আ. হ. ম. মিছবাহ উদ্দিন সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, "ড্রাইভার মহিউদ্দিন আমার গাড়ি চালান। তিনি আমাকে অফিসে আনা-নেওয়া করেন। তবে অফিস সময়ের বাইরে তিনি গাড়ি ব্যবহার করেন কি না, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। তাকে সতর্ক করা হবে, যাতে তিনি গাড়িটি যথাযথভাবে জমা দেন।"

    সিডিএর প্রশাসন বিভাগের সচিব রবীন্দ্র চাকমার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, "আমাদের কাছে মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। আপনারা এ নিয়ে রিপোর্ট করলে তদন্ত করতে আমাদের আরও সহায়তা হবে।"

    অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মহিউদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করে কল কেটে দেন। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

    এনআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…