গতকাল ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মিছিল ও সমাবেশ হয়। এসব কর্মসূচি থেকে দেশের কয়েকটি জেলার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে কেএফসি, ডমিনো'স পিৎজা, বাটা, কোকা-কোলা, পিৎজা হাটসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা। ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এসব ফুড চেইন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা হয়।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে খুলনা থেকে ৩১ জন, সিলেট থেকে ১৪ জন ও গাজীপুর থেকে ৪ জনকে গ্রেপ্তারকৃত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ও বেআইনি ঘটনায় পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই সব ঘটনায় জড়িত অন্তত ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলমান এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এর আগে গতকাল সোমবার রাতে দেশের বিভিন্ন শহরে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুরের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
নির্দেশনায় তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ আছে। তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে, অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশ বর্তমানে এ নিয়ে কাজ করছে।' আইজিপি আরও বলেন, 'সরকার কোনো ন্যায়সঙ্গত বিক্ষোভে বাধা দেয় না। তবে, প্রতিবাদ কর্মসূচির আড়ালে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।'
খুলনা
সোমবার দিবাগত রাতে শহরের বিভিন্ন স্থান অভিযান চালিয়ে খুলনায় বাটার শো রুম ও কেএফসি ফুড কোর্টে লুটপাটের ঘটনায় ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এবিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. আহসান হাবিব বলেন, ভিডিও ফুটেজ এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
গাজীপুর
এদিকে গতকাল গাজীপুরে মিছিল শেষে তৃপ্তি হোটেল, রাঁধুনী হোটেল ও বাটার ডিলারসহ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সাইন বোর্ড ভাংচুরের অভিযোগ, হামলা, লুটপাটের ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: সিয়ামখান (অনিক), শিমুল আহাম্মেদ শাওন, শাহীন ও জয়নাল আবেদীন।
এবিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজুল ইসলাম জানান, ভাঙচুরের ঘটনায় গাছা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় সরাসরি জড়িত, উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী ও মদদদাতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলামান আছে।
সিলেট
সিলেট নগরে একটি ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অবস্থিত কেএফসি রেস্টুরেন্টে ঢিল ছুড়ে গ্লাস ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় কোকা-কোলা, সেভেন আপসহ কোমল পানীয়ভর্তি একটি পিকআপ ভ্যান আটকে সব বোতল ভেঙে সড়কে ছিটিয়ে দেন তারা। এছাড়া নগরের চৌহাট্টা এলাকায় ডমিনো'স পিৎজা ও দরগাহ গেইটে বাটা শো-রুমেও ভাঙচুর চালানো হয়।
এদিকে সিলেটে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামসুল হাবিব। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কেএফসির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গতকালের ঘটনায় বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও দেখে ভাঙচুর ও লুটপাটে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন মামলার আসামিও রয়েছেন। এছাড়া বাটার শো রুম থেকে লুট হওয়া কয়েক জোড়া জুতা সিলেট নগরের তেররতন উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফেসবুকে জুতা বিক্রির বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে এগুলো উদ্ধার করা হয়।
বরিশাল
বরিশাল নগরীতে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কে কয়েকজন ছাদে উঠে কেএফসির লোগো ভেঙে ফেলেন এবং ব্যানার নিয়ে যান।
চট্টগ্রাম
এছাড়া গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার শহরে কয়েকটি দোকান-রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে কিছু লোক।
জানা যায়, প্রতিবাদ চলাকালে গতকাল বিকেলে বিক্ষুব্ধ জনতা চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে একটি কেএফসি আউটলেট এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে কোকা-কোলার একাধিক সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে একটি প্রতিবাদ মিছিল সানমার ওশান সিটি শপিং মলের কাচে পাথর, ইট ও জুতা ছুড়ে মারে। ভবনটিতে একটি কেএফসি রেস্তোরাঁ ও কোকা-কোলার ব্র্যান্ডিং ছিল। আরেকটি মিছিল থেকে নাসিরাবাদ এলাকায় কেএফসি আউটলেটে এবং আশেপাশের ভবনগুলোতে পাথর ও জুতা নিক্ষেপ করা হয়।
কক্সবাজার
গতকাল বিক্ষোভ মিছিল থেকে কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোন কলাতলীতে ইসরায়েলি পণ্যের সাইনবোর্ড থাকার অভিযোগে অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালানো হয়। কলাতলী এলাকায় কেএফসি, পিৎজা হাট, কাঁচা লংকা, পানসি ও মেরিন ফুড রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। এ সময় কাচের আঘাতে কয়েকজন পর্যটক আহত হন।
এদিকে চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন শুরুর দিনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা 'ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন' করে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
তিনি বলেন, 'যখন আমরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছি, তখন এ ধরনের ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেকেই স্থানীয় বিনিয়োগকারী, কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী আছেন যারা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রাখতেন। তারা সবাই আমাদের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।'
এবি