আগামী ১০ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় প্রবেশপত্র বিতরণে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ করেছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। বোর্ডের নির্ধারিত প্রবেশপত্র বাবদ কোনো ফি নির্ধারণ না করা হলেও কেন্দ্র ফি'র নামে সদর উপজেলার প্রতিটি মাদরাসা শিক্ষকেরা অবৈধভাবে এই অর্থ আদায় করছেন।
মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সদর উপজেলার আকুয়া মাদরাসা কোয়ার্টার নাসিরাবাদ দাখিল মাদরাসায় এক নারী অফিস কেরানি (করণিক) কেন্দ্র ফি'র নামে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছে এবং প্রবেশপত্র দিচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মাদরাসা বিদায় অনুষ্ঠান শেষে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রবেশপত্র আটকে কেন্দ্র ফি'র নামে অতিরিক্ত ৫০০/৭০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। যদি কেউ টাকা দিতে রাজি না হয় তবে প্রবেশপত্র আটকে দিচ্ছে, এতে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত টাকা দিচ্ছে পরীক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরীক্ষার্থী জানায়, দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় আমাদের কাছ থেকে সকল ফি নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু এখন আবার কেন্দ্র ফি'র নামে প্রবেশপত্র আটকে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা নিচ্ছে। কেউ না দিলে বিভিন্নরকম হুমকি দিয়ে শিক্ষাজীবন নষ্ট করার কথা বলছে, যেকারণে একরকম বাধ্য হয়েই আমাদের অভিভাবকরা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নিয়েছে।
তাঁরা আরও জানায়, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদায় অনুষ্ঠানের নামে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যা এখন রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েছে।
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিরাবাদ দাখিল মাদরাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে ডিসি অফিসের মিটিংয়ে ডিসি সাহেব আমাদেরকে কেন্দ্র ফি বাবদ ৫০০ টাকা করে নিতে বলেছেন, তাই আমরা টাকা নিচ্ছি। এতে দোষের কিছু নেই, আমরা সবসময়ই এই টাকা আদায় করি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবছর ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় মোট ২ টি কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে একটি মোমেনশাহী ডিএস কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্র, যেখানে পরীক্ষায় অংশ নিবে আল আরাবিয়া দাখিল মাদ্রাসা, নাসিরাবাদ দাখিল মাদ্রাসা, আল্লামা শাহ সুফি দাখিল মাদ্রাসা, অষ্টধার বালিয়াপাড়া আলিম মাদ্রাসা, ভাবখালী দাখিল মাদ্রাসা, বড়বিলা দাখিল মাদ্রাসা, চর হরিপুর দাখিল মাদ্রাসা, চরশীকলদী সাহেবীয়া দাখিল মাদ্রাসা, ঘাগড়া দাখিল মাদ্রাসা,পনঘাগড়া দক্ষিণপাড়া মহিলা মাদ্রাসা, রাগবপুর রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, রশিদপুর দাখিল মাদ্রাসা, চুরখাই ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা ও দক্ষিণ চরকালীবাড়ি দাখিল মাদরাসার ৪৯০ জন পরীক্ষার্থী।
মোমেনশাহী ডিএস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. ইদ্রিস খান বলেন, যেসকল পরীক্ষার্থী ফরম পূরণের সময় প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র ফি সহ সকল ফি জমা দিয়েছে তাদের প্রবেশপত্র নিতে অতিরিক্ত কোন টাকা দিতে হয় না, আর যেসব প্রতিষ্ঠান এখন টাকা নিচ্ছে এটা বোর্ড নির্ধারিত কোন ফি নয়।
অপর কেন্দ্র কাতলাসেন কাদেরীয়া কামিল মাদ্রাসা- গোপালনগর এমদাদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, গোস্টা দাখিল মাদ্রাসা, মেজবাহুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা ও আল কারীমুল বারী রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ১৮৪ জন পরীক্ষার্থী এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে কাতলাসেন কাদেরীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজ বলেন, আমার কেন্দ্রের অধিনে আমার মাদরাসাসহ ৫ টি মাদরাসা রয়েছে। আমি ফরম পূরণের সময় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র ফি নেইনি। যার কারণে এখন নিচ্ছি। আর ৪ টি প্রতিষ্ঠান এখন কেন্দ্র ফি জমা দিচ্ছে, তাঁরা আগে কেন্দ্র ফি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়েছে কি না, আমার জানা নেই, এটা তাঁরাই বলতে পারবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কোন প্রতিষ্ঠান নিয়ে থাকে, তবে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এনআই