এইমাত্র
  • আগামীকাল সাময়িক বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল
  • হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় গুজবে সয়লাব ফেসবুক : ফ্যাক্টওয়াচ
  • কওমী মাদ্রাসার বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচি এগিয়ে আনা হয়েছে
  • কলম্বিয়ায় স্কুলবাস খাদে পড়ে নিহত ১৭
  • হাদির ওপর হামলায় নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না: সিইসি
  • হাদিকে গুলি করা অভিযুক্ত মাসুদের ভারতে গিয়ে সেলফি
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় আরও ২ জন আটক
  • প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় উপদেষ্টার দপ্তরের নির্দেশে তদন্ত শুরু
  • সাবেক বিচারপতি মেজবাহ উদ্দিন মারা গেছেন
  • বাসভবন-কার্যালয় প্রস্তুত, সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন তারেক রহমান
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    রাজনীতি

    বাসভবন-কার্যালয় প্রস্তুত, সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন তারেক রহমান

    সময়ের কণ্ঠস্বর ডেস্ক প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ এএম
    সময়ের কণ্ঠস্বর ডেস্ক প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ এএম

    বাসভবন-কার্যালয় প্রস্তুত, সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন তারেক রহমান

    সময়ের কণ্ঠস্বর ডেস্ক প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ এএম

    দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছরের নির্বাসনের পর আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গুলশানে তাঁর সম্ভাব্য বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ের সংস্কারকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।

    বিএনপির লন্ডন শাখা সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত যাত্রীবাহী ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বিমানটি প্রথমে সিলেটের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সেখান থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। তাঁর সঙ্গে একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমানেরও ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

    গত শনিবার রাজধানীর গুলশানের গুলশান এভিনিউ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে দুটি গেট। গেট দুটির সামনে বসানো হয়েছে স্টিলের ব্যারিকেড। আর সড়কের ওপর স্থাপন করা হয়েছে তিনটি নিরাপত্তা বাক্স। বাড়ির প্রাচীর ও ভেতরে রুমগুলো সাদা রঙে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির নিরাপত্তায় রয়েছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। একই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছেন চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)।

    বাড়ির আশপাশ: গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে গুলশান এভিনিউ সড়ক। এই সড়কে রয়েছে অন্তত দুটি দেশের দূতাবাস। বাড়ির ঠিক সামনে তিনটি বহুতল ভবন। এ ছাড়া একতলা একটি স্থাপনা ও আরেকটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। বাড়ির উত্তর পাশে তিনতলা পুরাতন ভবন রয়েছে। বাড়ির দক্ষিণ পাশের ৭৯ নম্বর সড়কেই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’। বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের বাসভবনের অবস্থান পাশাপাশি। ১৯৬ নম্বর বাড়ি থেকে ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। দেয়ালের ওপর কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের সম্ভাব্য বাড়ির সামনে তিনটি পুলিশ বক্স স্থাপন করা হচ্ছে। আর বেগম জিয়ার বাড়ির সামনে চারটি পুলিশ বক্স আগে থেকেই রয়েছে।

    দেড় বিঘা আয়তনের বাড়িটি বেগম খালেদা জিয়ার নামে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর এই বাড়ির জায়গাটি বেগম খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। দীর্ঘ সময় তাঁর দখলে না থাকলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে নামজারির কাগজ বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বাড়িটিতে তিন বেড রুম, ড্রয়িং, ডাইনিং ও লিভিং রুম রয়েছে। ফাঁকা জায়গায় কিছু গাছও আছে। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ির ভেতরে সংস্কারকাজ চলছে। নতুন দরজা-জানালা লাগানো হয়েছে। তবে সংস্কার শেষ না হওয়ায় কোনো আসবাব আনা হয়নি।

    যেখানে দলীয় কাজ করবেন: জানা গেছে, গুশলানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়েই দলীয় কাজ করবেন তারেক রহমান। এ জন্য ভবনটির দ্বিতীয় তলায় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছাড়াও আরেকটি কামরা প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে আগে বসতেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরই মধ্যে মহাসচিবের কামরা চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নিচতলায় সরিয়ে আনা হয়েছে। এই কার্যালয়টিরও সংস্কার করা হচ্ছে। কার্যালয়ের প্রধান গেটে লাগানো হয়েছে রিমোট কন্ট্রোল দরজা। রয়েছে পকেট গেটও। ভবনের পেছনের অংশের ফাঁকা জায়গায় টিনের শেড লাগানো হয়েছে। ভবনের দেয়ালে রং করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও একটি কামরা প্রস্তুত করা হয়েছে তারেক রহমানের জন্য।

    তারেক রহমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য বিশেষ ডিজাইনের বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছে। চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্য সংখ্যা আগে ছিল ১০ জন। এখন তা বাড়িয়ে ২৫ জনের বেশি করা হয়েছে।

    তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘সিএসএফ গঠিত কিছু অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ও সৈনিক দিয়ে। চেষ্টা করা হয়, এসএসএফে যাঁরা চাকরি করেছেন তাঁদের রাখতে। সিএসএফ সাধারণ ক্রাউড নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু কারো যদি কোনো আত্মঘাতী কিছু করার পরিকল্পনা থাকে, সেটা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সে রকম সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। গড়ে ওঠা সহজও নয়। তবে আমি বলি, এসএসএফ সবচেয়ে উপযুক্ত। সিএসএফ তারেক রহমানের নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়। তারা উনার বাসার নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু উনি যখন মুভ করবেন, যখন জনগণের সঙ্গে মিশবেন তখন নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো আপস করা যাবে না। এটা করার জন্য আছে এসএসএফ। এ কাজে তারাই কিন্তু সবচেয়ে দক্ষ। তাদের ট্রেনিং দেওয়া হয় ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে। কোন কোন জায়গা থেকে হুমকি আসতে পারে, তারা সেদিকেই নজর রাখে। তাই ডিফেন্স ম্যানেজমেন্টের জন্য এসএসএফ সেরা।’

    বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাড়ির সংস্কারের বিষয়টি তদারকি করছেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন। তিনি বলেন, নতুন বাসার সংস্কার চলছে, শেষ হয়নি। তবে উনার মা যেখানে থাকেন, সেখানেও তিনটি রুম রেডি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাইলে ওখানেও উঠতে পারেন।

    বিএনপির প্রস্তুতি: তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনটিকে ‘অবিস্মরণীয়’ করে রাখতে চায় দলটি। এ জন্য তারেক রহমানের ফেরার দিন রাজধানী ঢাকায় স্মরণকালের বৃহত্তম জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি, নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ সার্বিক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

    বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সমন্বয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।

    বিএনপির নেতারা বলছেন, তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে সারা দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসবেন। বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু করে গুলশান-বনানী পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় জনসমাগম ঘটবে।

    এই প্রস্তুতির ইঙ্গিত সম্প্রতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব নিজেও। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক দলীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান যেদিন বাংলাদেশে পা দেবেন, সেদিন যেন সারা বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে।’ বিএনপি সেদিন দেশের রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিতে চায় বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।

    ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) বড়দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি। এরপর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ছুটির দিনেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।

    তারেক রহমান ২০০৭ সালে এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। এর পর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যেই আছেন। তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ৫ ডিসেম্বর দেশে আসেন হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ তাঁর শাশুড়ি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে।

    গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। মা খালেদা জিয়া গত মাসের শেষ দিকে গুরুতর অসুস্থ হয় পড়লে তারেক রহমানের দেশে ফেরা কবে, সে আলোচনা আরও জোরদার হয়। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর দেশে ফেরার তারিখ ঘোষণা করা হয়।

    তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে দলের জন্য একটি ঐতিহাসিক ও আবেগঘন ঘটনা হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

    রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দীপ্ত করবে। এর প্রভাব নির্বাচনী মাঠে পড়তে পারে। এ কারণেই তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের দিন ঢাকায় বৃহৎ জনসমাগম ঘটিয়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী ঢেউ তুলতে চায় দলটি।

    এসকে/আরআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…