কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মসজিদের পরিচালনা কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় বেশ কয়েকটি দোকান ও বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (০৮ এপ্রিল) রাত রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পৌর শহরের চণ্ডিবের মীর বাড়ি ও কাজি বাড়ির মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ, র্যাব ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভৈরব ক্যাম্পের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- চাঁদ মোল্লা (২৫), রাফি মিয়া (২০) ও জুয়েল মিয়া (৪২)।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের আহতরা হলেন- সোলেমান মিয়া (২৭), রাব্বী মিয়া (১৭), সাকিব মিয়া (২৬), ইমন মিয়া (২৪), মোছা মিয়া (৩০), রাতুল (২২), শ্রাবণ (১৯), সোলমান (৪৮), অলি উল্লাহ (১৬), ইয়াছিন (১৯), ছামি (১৪), সোহাগ (২০), আল আমিন (১৮), ইয়াছিন (১৫), সাজ্জাদ (২০), সিয়াম (১২), রায়হান (১৮), বাদশা (১৮), প্রিয়াঙ্কা (২০), জন মিয়া (১৯)। এদের মধ্যে গুরুতর আহত সোলেমানকে কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও অলি উল্লাহকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও ইমন (২২), রিয়াদ (২২), মুর্শিদ (৫০), আশিক (২৪) ও আফজাল মীর (২২)সহ অন্যান্য আহতরা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ দিকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক মিজান পাটোয়ারি (৪৫) আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
স্থানীয়রা জানান, মীর বাড়ি ও কাজি বাড়ির মধ্যে মীর বাড়িতে নুরানি জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদটির সভাপতি ছিলেন পার্শ্ববর্তী বংশ মোল্লা বাড়ির মিজান মোল্লা। (০৭ এপ্রিল) দীর্ঘ দিনপর কমিটি গঠন করতে বসেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এসময় কমিটি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়। পরে রাতেই উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়া হলে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। পর দিন ৮ এপ্রিল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিষয়টি মীমাংসা করতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ চেষ্টা করে। দিনভর এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করে। বিকালে উভয় পক্ষ মীমাংসার জন্য বসলে কেউ একজন মসজিদটি মীর বাড়ির নয় বলে জানালে উভয়পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। সালিশি দরবার থেকেই সন্ধ্যা ৬টায় সংঘর্ষ শুরু হয়। থেমে থেমে সংঘর্ষ হলেও রাত ৯টার পর মীর বাড়ি ও কাজি বাড়ি ইট পাটকেল, দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের ৫০ জন আহত হয়। এসময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মধ্যস্থানে থাকা নিরপরাধ মানুষদের বাড়িঘর দোকান পাট ভাঙচুর হয়েছে। এটি অমানবিক। অপরাধীদের কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে।
মীর বাড়ির জাকির মীর বলেন, আমাদের বাড়ির মসজিদ। মোল্লা বাড়ি ও কাজি বাড়ি একত্রিত হয়ে আমাদের মসজিদে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। আমাদের মসজিদকে ওয়াহাবি সুন্নি সাজিয়ে এলাকায় দুইগ্রুপ তৈরি করে রেখেছে কাজি বাড়ির মানুষ।
কাজি বাড়ির সাকিব বলেন, মসজিদটি মীর বাড়ির হলেও কাজি বাড়ির কমিটিকে ওয়াক্ফ করে দিয়েছে। এখন মীর বাড়ি মসজিদ কমিটি নিজেদের মতো করে করতে চাই। ভৈরবের নেতৃবৃন্দ মসজিদে যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের কথা অমান্য করে কাজি বাড়ি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুল করিম জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টা থেকে মারামারিতে আহত রোগী আসতে শুরু করে। রাত ১২টা পর্যন্ত ২০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে ১ জনকে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও আরও ১ জনকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানীর সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে আসি। এসময় র্যাব ও সেনা সদস্যদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এআই