এইমাত্র
  • পাকিস্তানের পাল্টা সিদ্ধান্তে বড় ক্ষতির মুখে ভারতীয় এয়ারলাইন্স
  • ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ
  • 'ভারতকে পরিণাম ভোগ করতে হবে’, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি
  • কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি
  • কাশ্মিরে হামলা ভারতের ‘সাজানো’ ঘটনা
  • ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরতে বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব
  • জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত বাংলাদেশ
  • মারা গেছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের স্ত্রী জাহানারা আবেদিন
  • যে কোনো সময় পাকিস্তানে হামলা করতে পারে ভারত
  • ভারতে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ
  • আজ শুক্রবার, ১২ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    রাজশাহীর দুর্গাপুরে ফসলি জমির বুকে ভেকুর তাণ্ডব

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ পিএম
    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

    রাজশাহীর দুর্গাপুরে ফসলি জমির বুকে ভেকুর তাণ্ডব

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ পিএম

    রাজশাহীর দুর্গাপুরে যেন কৃষি জমির বুকে চলছে এক নীরব দুর্বৃত্তায়ন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একের পর এক ফসলি জমি রাতের আঁধারে খনন করা হচ্ছে পুকুর তৈরির জন্য। খোলা চোখে দেখতে গেলে এটি একটি ভূমি ব্যবহারের অনিয়ম মাত্র, কিন্তু গভীরে ঢুকলেই ভেসে ওঠে এক প্রভাবশালী চক্রের সংঘবদ্ধ অপরাধচিত্র, যেখানে জড়িত রাজনৈতিক নেতারাও।

    বাংলাদেশের বিদ্যমান কৃষি নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষি জমিতে অনুমতি ছাড়া শ্রেণি পরিবর্তন করে কোনো ধরনের নির্মাণ বা খনন কাজ বেআইনি। তবে দুর্গাপুরে এই আইন যেন কাগজেই সীমাবদ্ধ। মাড়িয়া, দেলুয়াবাড়ী, জয়নগর, কিসমতগনকৈড়সহ সাতটি ইউনিয়নে শত শত বিঘা কৃষি জমি পুকুরে রূপান্তরিত হচ্ছে চোখের সামনেই।

    অনুসন্ধানে জানা যায়, অধিকাংশ খনন কাজ চলে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। স্থানীয় এক ভেকু চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রতি রাতে অন্তত ৪-৫টা জায়গায় একসঙ্গে ভেকু চলে। কাজ চলে দ্রুত, যেন সকাল হওয়ার আগেই সব শেষ করে ফেলা যায়।”

    প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযানের কথা বলা হলেও বাস্তবে তেমন কিছু দেখা যায় না। দুর্গাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন চৌধুরী বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।” কিন্তু অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র।

    ভেকু চালক, মাটি ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, অভিযানের আগে খবর পৌঁছে যায় সংশ্লিষ্টদের কাছে। এক স্থানীয় ইউপি সদস্য জানান, “অভিযান হবার কথা থাকলে রাতেই সব ভেকু সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রশাসনের ভেতরে থেকেই কেউ তথ্য ফাঁস করে দেয়।”

    স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা প্রশাসনের সঙ্গে ‘অপঠিত সমঝোতা’ করে পুরো উপজেলা জুড়ে এই খনন কাজ পরিচালনা করছেন। চৌবাড়িয়া, কাশেমপুর, ও নারিকেলবাড়িয়ায় যারা জমি কিনে পুকুর খনন করছেন, তাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন রয়েছেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।

    একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “পুকুর খননের পেছনে মূল হোতারা নিজেরা সামনে আসে না। তারা ভেকু দালাল, মাটি ব্যবসায়ী আর ইউনিয়ন পর্যায়ের লোকজনকে ব্যবহার করে।”

    প্রতিটি পুকুর খননের পর জমির মাটি ট্রাক্টর বা ট্রাকে তুলে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ইটভাটা, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের কাছে। একটি ৫০ বিঘার পুকুর থেকে প্রায় ৫০০ ট্রাক মাটি ওঠে, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫-৩০ লাখ টাকা। অথচ সরকারের কোনো রাজস্ব যায় না, নেই পরিবেশের জন্য কোনো ছাড়পত্রও।

    এক স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা মূল হোতাদের কাছে কাজ করি। তারা চায় না কোনো ঝামেলা হোক, তাই স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক স্তরে নিয়মিত 'মেনেজমেন্ট' হয়।”

    শুধু কৃষি জমিই নয়, এসব খননের ফলে দুর্গাপুরের বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সরকারি অর্থে পাকাকরণ করা সড়কে এখন নিয়মিত ট্রাক্টর ও ট্রাক চলাচল করছে মাটি পরিবহনের জন্য। ফলে ভেঙে পড়েছে অনেক রাস্তাঘাট, বেড়েছে দুর্ঘটনা, স্কুলে যাওয়া শিশুদের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে প্রতিদিন।

    একজন বৃদ্ধা বলেন, “সকাল হলেই রাস্তা দিয়ে মাটি বোঝাই গাড়ি যায়। এত ধুলা আর গর্ত যে চলাচলা করাই দায়। কেউ শুনে না আমাদের কথা। এমনকি রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।”

    স্থানীয় সুশীল সমাজ ও পরিবেশবাদীরা এই খনন কর্মকাণ্ডের পেছনে যারা আছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। পরিবেশ অধিদফতর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের যৌথ তদন্ত ছাড়া এই অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও তারা মনে করেন।

    রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, “এই হারে কৃষি জমি নষ্ট হতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদনে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে।”


    এনআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…