এইমাত্র
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় আরও ২ জন আটক
  • প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় উপদেষ্টার দপ্তরের নির্দেশে তদন্ত শুরু
  • সাবেক বিচারপতি মেজবাহ উদ্দিন মারা গেছেন
  • বাসভবন-কার্যালয় প্রস্তুত, সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন তারেক রহমান
  • ফটিকছড়িতে অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা-কৃষি জমি, হুমকিতে পরিবেশ
  • আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
  • মেসি-শচীনের ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ, উপহার বিনিময়
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় মামলা
  • হাবিবুরসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু আজ
  • বাংলাদেশি শান্তিকর্মীদের ওপর হামলা, সুদানকে সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    নিরব আঁধারে এক জনপদের কান্না, বিদ্যুৎহীন দুর্বিষহ জীবন চর আষাড়িয়াদহ

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম
    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

    নিরব আঁধারে এক জনপদের কান্না, বিদ্যুৎহীন দুর্বিষহ জীবন চর আষাড়িয়াদহ

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

    পদ্মা নদীর বুকে অবস্থিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন। প্রায় ৬০-৭০ হাজার মানুষের বসবাস এই চরে। অথচ আধুনিক বাংলাদেশের বুকে দাঁড়িয়ে এই জনপদ আজও বিদ্যুৎবিহীন। আষাড়িয়াদহ ছাত্র-কর্মজীবী জোট এর স্মারকলিপির মাধ্যমে ফের একবার আলোচনায় এসেছে এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনার গল্প।

    আষাড়িয়াদহে পৌঁছাতে হয় নৌকায়। নদীর ওপারেই একখণ্ড বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ যেখানে রাত নামলেই নেমে আসে অন্ধকার। এখানে নেই কোনো বৈদ্যুতিক বাতির আলো, নেই ফ্যানের বাতাস বা ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানির স্বাদ। অথচ এই ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার ভোটার রয়েছেন, যাঁরা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়মিত অংশ নিয়ে আসছেন।

    শুধু অন্ধকার নয়, এই বিদ্যুৎহীনতা ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। আষাড়িয়াদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী লিজা খাতুন জানায়, “আমরা সন্ধ্যা নামলেই পড়া বন্ধ করে দিই। কেরোসিনের বাতি আর চেরাগে চোখ ব্যথা হয়ে যায়। পরীক্ষার সময় সবচেয়ে কষ্ট হয়।”

    শিক্ষাক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব ভয়াবহ। স্কুলগুলোতে নেই কম্পিউটার, নেই ডিজিটাল পাঠদানের সুযোগ। কোনো স্টুডেন্ট যখন অনলাইন ক্লাসের কথা শোনে, তখন সেটি তাদের কাছে রূপকথার গল্পের মতো লাগে।

    বিদ্যুৎ না থাকায় এখানকার স্বাস্থ্যসেবা কার্যত অচল। চর আষাড়িয়াদহ কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, “শীতল রাখার জন্য ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা যায় না। স্যালাইন চালানোর মেশিন নেই। রোগীদের অন্ধকারেই সেবা দিতে হয়।”

    রাতে যদি কোনো প্রসূতি গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তখন নৌকায় করে নদী পেরিয়ে মূল ভূখণ্ডে যেতে হয়। অনেক সময় সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুও ঘটে। অথচ ২১ শতকের বাংলাদেশে এমন দৃশ্য সত্যিই কষ্টদায়ক।

    এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। ধান, পাট, শাকসবজি, আর মৌসুমি ফল উৎপাদন করে সংসার চালান তাঁরা। কিন্তু সেচ ব্যবস্থার জন্য বিদ্যুৎ না থাকায় কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে। ডিজেলচালিত পাম্পের খরচ বহন করতে না পেরে অনেকেই জমি পতিত রেখেছেন।

    কৃষক শাহাবুদ্দিন বলেন, “ডিজেলের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ থাকলে অন্তত মোটর চালিয়ে সেচ দিতে পারতাম। এখন লাভ তো দূরের কথা, খরচও উঠছে না।”

    বিদ্যুৎ না থাকায় এই অঞ্চলে কোনো কোল্ড স্টোরেজ নেই, নেই আইসক্রিম বা ঠাণ্ডা পানীয়ের দোকান। ফলে বাজারও এক ধরনের স্থবিরতায় ভুগছে। যেকোনো ছোট ব্যবসা—যেমন দর্জি, সেলুন, মুদিদোকান, কিংবা হোটেল সবকিছুতেই উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।

    মুদিদোকানদার ফজলুর রহমান বলেন, “ফ্রিজ নেই বলে দুধ, পানীয় এসব রাখা যায় না। কাস্টমারও আসে না। লোকসান দিয়ে ব্যবসা টিকে আছে।”

    ২০১৫ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে ১৫৮ কিলোওয়াট ক্ষমতার মিনি-সৌর বিদ্যুৎ গ্রিড চালু করে। কিন্তু সেটা বর্তমানে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। পিক আওয়ারে মাত্র ৩৫-৪০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারত, যা সামান্য কিছু ঘরের জন্যও যথেষ্ট ছিল না। ২০২৪ সালের ২০ জুন থেকে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে পুরো ইউনিয়ন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। নিচমানের সৌর প্যানেল বিতরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোও অকেজো। ফলে এখানকার মানুষ এখনও কেরোসিনের উপর নির্ভরশীল, যা একদিকে ব্যয়বহুল, অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ।

    শনিবার (১২ এপ্রিল) রাজশাহীতে নেসকো পিএলসি স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন অফিসে গিয়ে স্মারকলিপি দেয় আষাড়িয়াদহ ছাত্র-কর্মজীবী জোট। তাঁদের দাবি—নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই বিদ্যুৎ সংযোগ অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে। জোটের সভাপতি আবদুল্লাহ আল কাফি বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হয়ে গেলেও আমরা এখনও চেরাগের আলোয় পড়াশোনা করি। এটা শুধু অবহেলা নয়, এটা বৈষম্য। আলোর অধিকার চাই, এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।

    নেসকোর চেয়ারম্যান ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ স্মারকলিপি গ্রহণ করে বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং আমরা ফান্ড ক্রিয়েট করে দ্রুত আশারিয়াদহে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করবো। তবে এমন আশ্বাস নতুন নয়। বিগত বছরগুলোতেও এমন অনেক প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে এবার মানুষ চায় কার্যকর পদক্ষেপ।

    চর আষাড়িয়াদহ শুধু একটি ইউনিয়ন নয় এটি বাংলাদেশের সেইসব অঞ্চলের প্রতিচ্ছবি, যেগুলো উন্নয়নের আলো থেকে এখনো বঞ্চিত। বিদ্যুৎহীনতা এই অঞ্চলের মানুষকে আধুনিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে, জীবনমান করেছে দুর্বিষহ।

    এই অঞ্চলের মানুষ একটাই প্রশ্ন করছে আমরা কি বাংলাদেশি নই? যদি হই, তবে কেন এই অবহেলা? কেন এই বৈষম্য?

    যে জাতি মঙ্গলে অভিযান পাঠাতে চায়, সে জাতির কিছু সন্তান এখনো কেরোসিনের চেরাগে রাত পার করে। এই বৈপরীত্য দূর করতে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত যাতে চর আষাড়িয়াদহসহ দেশের প্রতিটি জনপদ সত্যিকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর অংশ হয়ে উঠতে পারে বলে জানিয়েছে সুশীল সমাজ।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…