এইমাত্র
  • জব্বারের বলীখেলা: দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ‘বাঘা শরীফ’
  • পাকিস্তানের পাল্টা সিদ্ধান্তে বড় ক্ষতির মুখে ভারতীয় এয়ারলাইন্স
  • ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন দলের আত্মপ্রকাশ
  • 'ভারতকে পরিণাম ভোগ করতে হবে’, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি
  • কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তান সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি
  • কাশ্মিরে হামলা ভারতের ‘সাজানো’ ঘটনা
  • ভারত-পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য’ ধরতে বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব
  • জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত বাংলাদেশ
  • মারা গেছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের স্ত্রী জাহানারা আবেদিন
  • যে কোনো সময় পাকিস্তানে হামলা করতে পারে ভারত
  • আজ শুক্রবার, ১২ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    জনবল সংকট ও নানা অনিয়মে জর্জরিত লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম
    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

    জনবল সংকট ও নানা অনিয়মে জর্জরিত লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল

    ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

    প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান জনবল সংকট ও নানা অনিয়মে ব্যাহত হচ্ছে ১০০শয্যা বিশিষ্ট লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল এর সেবা কার্যক্রম। ১০০ শয্যা হাসপাতালের সেবা দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে। দীর্ঘদিন থেকে সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, মেডিসিন, ইএনটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু, সার্জারী, ইএনটি, এমও প্যাথলজিষ্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ ১২টি পদ পুরোপুরি শূন্য রয়েছে।

    এছাড়াও ১শ শয্যার এই হাসপাতালটিতে মোট ১৫৪ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ৯৫জন। মোট ৫৯ টি পদ শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে এক্সরে, আলট্রাসাউন্ড সহ প্রয়োজনীয় অনেক স্বাস্থ্য পরিক্ষা বন্ধ রয়েছে। নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দালালদের দৌরাত্ম্য ও চুরির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

    ডাক্তার সংকটঃ হাসপাতালটিতে সিনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, মেডিসিন ও ইএনটি তিনটি পদের তিনটিই পুরোপুরি শূন্য রয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু ও ইএনটি পদ দুটিও দীর্ঘ দিন থেকে শূন্য রয়েছে। তিন জন এমও পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২জন। এমও প্যাথলজিষ্ট পদটিও অনেক দিন থেকে শূন্য রয়েছে।

    ফলে প্রয়োজনীয় ডাক্তার এর স্থলে অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

    নার্স সংকটঃ নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে দুই জন নার্সিং সুপারভাইজার থাকার কথা। সেখানে একজন সুপারভাইজার রয়েছে। অকোপানশনাল থেরাপিষ্ট পদে কোন জনবল নেই। সিনিয়র স্টাফ নার্স পদে ৫৯ জন এর স্থলে ৫৩জন রয়েছে। স্টাফ নার্স পদে ২৩জন এর স্থলে মাত্র ৫জন কর্মরত আছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে ২৩জনের স্থলে ১৮টি পদই শূন্য রয়েছে। মিডওয়াইফ পদ ৬টির ৬টিই শূন্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সহকারী সেবক ৫জন এর স্থলে তিন জন কর্মরত আছেন। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপাঃ পদেও কোন জনবল নেই। দুইজন ড্রাইভার এর স্থলে এক আছেন। তিন জন বাবুর্চি, সহকারী বাবুর্চির কাজ করতে হচ্ছে একজন কে দিয়ে। ১০জন অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) কাজ করছেন মাত্র ২জন। হাসপাতালের জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার হাজার হাজার মানুষ।

    নিম্ন মানের খাবার পরিবেশনঃ হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের দাবি নির্ধারিত মান অনুযায়ী রোগীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে না। রোগীদের দাবি যে সব খাবার দেওয়া হচ্ছে এগুলো খাওয়ার উপযোগী না। বাধ্য হয়ে অনেকে বাহির থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা সেবার ব্যায় বাড়ছে তাদের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবী করেন খাবারের মান নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। কোন অসংগতি থাকলে সেটা সমাধান করা হচ্ছে।

    ধারন ক্ষমতার দ্বিগুন রোগীঃ ১শ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ২শ থেকে ২৫০জন এর উপর রোগী ভর্তি হচ্ছে। সীট এর অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় হাসপাতালের মেজে ও বারান্দায় ফ্লোরে রোগীদের থাকতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা সেবা দিতে মিমশিমে পড়ছেন কর্তৃপক্ষ।

    নতুন ভবনের কাজের ধীরগতিঃ ২০১৭সালে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের কাজ শুরু করে লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগ। নির্ধারিত সময়ের ৮বছর পার হয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি ১০তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। দ্রুত কাজ শেষ করে ভবনটি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। কাজ শেষ করে ভবনটি বুঝিয়ে দিলে হাসপাতালের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা ব্যাক্ত করেন তাঁরা।

    প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী দেখাঃ সময়ের কন্ঠস্বরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, অধিকাংশ ডাক্তার নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে আসেন না। আবার অনেকে হাসপাতালে এসে হাজিরা দিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে অনকলে রোগী দেখে আসেন। হাসপাতালে ডিউটি চলাকালীন সময়ে অনেক ডাক্তার কে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির মোটরসাইকেলে করে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ছুটছেন। এদিকে সরকারি হাসপাতালে তার রুমের সামনে লাইন ধরে রোগীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন। কখন আসবেন ডাক্তার। কখন মিলবে চিকিৎসা। প্রতিদিন একই চিত্র দেখা যায় ।

    হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেঃ অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, পুরুষ ওয়ার্ড়, নারী ও শিশু ওয়ার্ড়, ডায়রিয়া ওয়ার্ড় সহ হাসপাতালের প্রতিটি ইউনিট ঘুরে দেখা যায়, বাথরুম গুলো ব্যবহার করার মতো কোন পরিবেশ নেই। অধিকাংশ বাথরুমে পানির লাইন নষ্ট হয়ে আছে। অনেক গুলোতে পানি ব্যবহারের বদনা পর্যন্ত নেই। প্রতিটি ইউনিটের মেঝে ও বারান্দায় ময়লার স্তুপ হয়ে আছে। নিয়মিত ঝাড়ু না দেওয়ায় অপরিষ্কার পরিবেশেই থাকতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের সামনের ড্রেন গুলো উম্মুক্ত থাকায় নোংরা পানি ও ময়লার গন্ধে নাক চেপে চলাফেরা করতে হয় হাসপাতালে আসা লোকদের। এতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগী ও তাদের সাথে আসা স্বজনরা।

    হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সুইপার ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীপদে বর্তমানে কোন জনবল না থাকায় হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে কিছু সমস্যা হচ্ছে। বাহিরের লোক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে।

    প্যাথলোজিঃ এক্সরে, আল্ট্রাসাউন্ড সহ গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরিক্ষা বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে। ডাক্তার টেকনিশিয়ান তাকলে যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকে। আবার যন্ত্রপাতি ঠিক তাকলে ডাক্তার টেকনিশিয়ান থাকে না। প্যাথলোজিতে চাহিদার তুলনায় জনবল সংকট রয়েছে প্রায় অর্ধেক। বার বার চিঠি দিয়েও কোন সমাধান হচ্ছে না বলে জানান কর্তৃপক্ষ।

    ২৪সালের ডিসেম্বর থেকে এক্সরে ফ্লিম নেই। আলট্রাসাউন্ড পরিক্ষা করার ডাক্তার "সনোলজিস্ট" পদটি ১০বছর থেকে শূন্য রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে এসব পরিক্ষ নিরিক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। এতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীদের।

    দালাল ও চোরের দৌরাত্ম্যঃ প্রত্যান্ত গ্রাম গঞ্জ থেকে আসা সহজ সরল রোগীদের ভুল বাল বুঝিয়ে হাসপাতালে একশ্রেণির দালাল রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যান। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই সব দালাল চক্রের সাথে হাসপাতালের কিছু স্টাফ সরাসরি জড়িত। সম্প্রতি সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সাত দালাল কে আটক করে।

    অপরদিকে প্রায় সময় হাসপাতালে রোগীদের নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণ অলংকারসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের দাবী হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা থাকলেও কোন জিনিস চুরি হওয়ার পর সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায় না। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, তাদের ক্যামেরা নষ্ট বা কাজ করে না। ভুক্তভোগীদের দাবী দিন দিন চোর ও দালাল চক্রের দৌরাত্ম বাড়লেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

    লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডাঃ অরুপ চন্দ্র পাল সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, ১শ শয্যার হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০শ রোগী ভর্তি হচ্ছে। আমাদের চিকিৎসক সহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকট রয়েছে।

    অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যে কয়জন জনবল আছে তাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। নতুন ভবনের কাজ সম্পূর্ণ হলে এবং প্রয়োজনীয় জনবল পেলে এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে। যেকোনো অনিয়ম ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

    এবিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ আবু হাসান শাহীন সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, সদর হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। জনবল ও আবাসন সংকট রয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও অন্যান জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাহিদা মতো ডাক্তার ও জনবল দিলে এই সমস্যার সমাধান হবে। নিম্নমানের খাবার ও অপরিচ্ছন্নতা বিষয়ে বলেন, খাবারের বিষয় টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালে নিজস্ব কোন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই। আমরা কিছু লোকজন দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কাজ করাচ্ছি। যতটুকু সম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। দালাল বা অন্য যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসকল বিষয় গুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

    এছাড়াও সকল অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    এনআই

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    চলতি সপ্তাহে সর্বাধিক পঠিত

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…