এইমাত্র
  • ভারতের কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় অন্তত ২৪ পর্যটক নিহত
  • সোনার দাম ছাড়াল পৌনে ২ লাখ টাকা
  • শায়েস্তাগঞ্জে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
  • দাউদকান্দিতে ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল গ্রেপ্তার
  • পরীমনির নামে মামলা করলেন সেই গৃহকর্মী
  • ময়মনসিংহ মেডিকেলে র‌্যাবের অভিযানে নারীসহ ১৪ দালাল গ্রেফতার
  • নড়াইলে দাড়ার খাল পুনঃখনন কাজের উদ্বোধন
  • সিরাজদিখানে ২ কারখানাকে ৭৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড
  • গাজায় স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকিতে ৬ লাখ শিশু
  • সম্পর্ক জোরদার করতে সৌদি আরব গেলেন মোদী
  • আজ মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ, ১৪৩২ | ২২ এপ্রিল, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    মিরসরাইয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উত্তপ্ত স্থানীয় রাজনীতি

    জাবেদুল ইসলাম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
    জাবেদুল ইসলাম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ পিএম

    মিরসরাইয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উত্তপ্ত স্থানীয় রাজনীতি

    জাবেদুল ইসলাম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৩ পিএম

    চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির রাজনীতি চলতি বছরের শুরু থেকেই চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কমিটি নিয়ে বিরোধ, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

    চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ১৮ মার্চ বিএনপির উপজেলা, বারইয়ারহাট ও মিরসরাই পৌরসভা এই তিন ইউনিটের পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এনিয়ে আনন্দ মিছিল করে বিএনপির একাংশ। এরপর ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলার ওই তিনটি ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

    নতুন কমিটিগুলোর মধ্যে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় আবদুল আওয়াল চৌধুরীকে এবং সদস্য সচিব হন আজিজুর রহমান চৌধুরী। মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির নেতৃত্বে আনা হয় জামশেদ আলম কমিশনারকে আহ্বায়ক হিসেবে এবং কামরুল হাসান লিটনকে সদস্য সচিব করা হয়। বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির জন্য মাঈন উদ্দিন লিটনকে আহ্বায়ক এবং জসীম উদ্দিনকে সদস্য সচিব মনোনীত করা হয়। এনিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে কোন্দল প্রকট হতে থাকে।

    কমিটি ঘোষণার পরপরই দলীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ নতুন কমিটিগুলোকে ‘পকেট কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। এর ফলে শুরু হয় বিক্ষোভ ও অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা। কমিটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় মিছিল-মিটিং ও বিক্ষোভ এ উত্তপ্ত হয়ে উঠে মিরসরাই বিএনপির রাজনৈতিক মাঠ।

    পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে গত ২৬ মার্চ, যখন বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে মো. জাবেদ (৪৫) নামে এক পথচারী নিহত হন এবং উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হন। দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। এরআগে, ওই দিন সকালে দুপক্ষের নেতাকর্মীদের শহীদ মিনার এলাকায় পুষ্পস্তবক অর্পণে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

    জানা গেছে, একই সময় মিরসরাইয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলমান বালু উত্তোলন কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে আরেকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আরও কয়েকজন আহত হন। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছিল, যা সংঘর্ষের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

    এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনটি ইউনিটের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে আরেকটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন।

    তবে পরিস্থিতি শান্ত না হয়ে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সর্বশেষ সোমবার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখের দিন। এদিন একটি শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে মিরসরাই পৌর এলাকায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়।

    এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম জানান, বিগত ১৭ বছর মিরসরাই যারা বিএনপির রাজনীতি করেছে তাদের বঞ্চিত রেখে কমিটি, একমিটি মাঠে রান করার মত কোন ক্যাপাসিটি নাই। সবাইকে নিয়ে কমিটি না দেওয়া পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় কমিটিকে সকলের গ্রহণযোগ্য একটি কমিটি দেয়ার জন্য আহবান করছি।

    নব কমিটির উপজেলা আহবায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী বলেন, গতকাল (১ লা বৈশাখ) কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী সুশৃঙ্খল ভাবে শোভাযাত্রা করি চলে আসি। পরে দেখতেছি বিচ্ছিন্ন ভাবে আমাদের কিছু নেতাকর্মীদের উপর কিছু সন্ত্রাসী আক্রমণ করে। কারো কারো বাড়িতেও হামলা করে। এরা কারা? এরা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন চিহ্নিত সন্ত্রাসী যদি এসব কার্যক্রম করে আমি প্রশাসনকে বলছি যেন ভালোভাবে ব্যবস্থা নেয়।

    কমিটির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, কমিটি হাইকমান্ড বুঝবে, হাইকমান্ড দিচ্ছে হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ করতেছি। কে কি বললো আমার দেখার বিষয় না। কমিটি দেয়া নেওয়া কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাপার। দল যে কাউকে দায়িত্ব দিতে পারে আবার পরিবর্তনও করতে পারে।

    বার বার বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষের বিষয়ে মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান জানান, মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হচ্ছে। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে যারাই অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং যারা বার বার অপরাধ করবে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

    উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মিরসরাইয়ে বর্তমানে দলীয় শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। একের পর এক সংঘর্ষ, কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ সব মিলিয়ে বিএনপির স্থানীয় রাজনীতি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

    এসআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…