নিঃসন্দেহে দেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার ও বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাকিব আল হাসান আর দেশে ফিরতে পারেননি সেই সাথে খেলতে পারেননি আর বাংলাদেশ দলের হয়েও। তার কারণ জুলাই ও তার পূর্বে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। জুলাই আন্দোলনের সময় থেকেই সাকিবের প্রতি জনরোষের বিষয়টির আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল।
ক্ষোভের শুরুটা হয় যখন গত বছর জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নীরব ভূমিকা পালন করেন। সেই সময় নীরব ভূমিকার জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাকিব। আর সেই আগুনে ঘি ঢেলেছিল সাকিবের স্ত্রী শিশির।
পুরো দেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, তখন সাকিবকে দেখা গিয়েছিল কানাডায় সাফারি পার্কে ঘুরতে। আর সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন সাকিবের স্ত্রী শিশির। দেশের পটপরিবর্তনের পর সেই সময়ে সাকিবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। এরপর আসলে আর দেশেই ফিরতে পারেননি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এই সংসদ সদস্য।
কেন সেই সময় এমন নীরব ভূমিকা নিয়েছিলেন, সাফারি পার্কে ঘোরাঘুরির ছবিটা দেওয়া কি ভুল ছিল, এ রকম অনেক কিছু নিয়ে সাকিব কথা বলেছেন সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।
সাকিব জানালেন, একজন ‘পাবলিক ফিগার’ হিসেবে অমন ছবি তোলা উচিত হয়নি তার। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমি দেশ থেকে অনেক দিন ধরেই দূরে ছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রে এমএলসি খেলছিলাম, এরপর কানাডায় খেললাম। আমি মোটেও এই ছবি নিজে পোস্ট করি নি, তবে এরপরও আমি এর দায়টা নিচ্ছি। পাবলিক ফিগার হিসেবে আমার আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
তবে এই এক ছবির প্রতিক্রিয়া এভাবে হবে, কল্পনাও করেননি সাকিব। কারণ দেশে কী ঘটে যাচ্ছে, সাকিবের কোনো আন্দাজই ছিল না! তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি ভাবতেও পারিনি বিষয়টা এভাবে বিস্ফোরিত হবে। এরপর আমি বুঝতে পারলাম পরিস্থিতিটা কতটা গুরুতর। আমি মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, যারা আমাকে জানিয়েছে ছবিটার টাইমিংই তাদের কষ্ট দিয়েছে। এটা একটা ভুল ছিল। আমাকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
সে ছবি প্রকাশ করার পর একবার এক সমর্থকের সঙ্গেও বাগবিতণ্ডা হয়েছে তার। কানাডার লিগে খেলার সময়ে তাকে গ্যালারি থেকে কেউ একজন বলে বসেন, দেশে এত কিছু হয়ে যাচ্ছে, সাকিব কেন কিছু করছেন না বা বলছেন না। সাকিবও তার পালটা জবাব দিয়েছিলেন সেদিন।
সে পরিস্থিতিটায় কী হয়েছিল, সাকিব জানালেন এবার। তিনি বললেন, ‘আমি মনে করি ওই লোকটা আমাকে উত্যক্ত করতে এসেছিল, অথবা সে হতাশ ছিল। সে আমাকে প্রশ্ন করছিল আমি কেন কিছু করছি না, তারপর আমি জিজ্ঞেস করলাম ভাই আপনি কী করেছেন? সেখান থেকে বিষয়টা অনেক বড় কিছু হয়ে গেল।’
সে পরিস্থিতিতে সাকিব অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়ই হয়ে পড়েছিলেন, জানালেন তিনি নিজেই। তার কথা, ‘তাকে, সেখানে থাকা আরও অনেক জনকে জিজ্ঞেস করেছি, আমাকে বলুন আমি কী করতে পারি। আমি ইস্যুটাকে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম না। তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করাটা কার্যকর হবে। সরকার, ও অন্যরা আমাকে কিছু পোস্ট করতে বলছিল। কিন্তু তা করে কী লাভ হতো? এটা কি বিষয়টাকে সাহায্য করত? এটা কি আগুনে ঘি ঢালতো?’
এরপরও সাকিব জুলাইতে কোনো পোস্টই করেননি, কিছুই বলেননি, নীরবতাও ভাঙেননি। কেন তা করেননি? সে প্রসঙ্গে সাকিব জানান, শুধু বলাটাকে তার কাছে ফাঁকা বুলি মনে হতো, সে কারণে একেবারে চুপ ছিলেন তিনি। তার কথা, ‘আমি সবসময়ই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করাতে বিশ্বাসী ছিলাম। যদি আমি পরিবর্তনটা সরাসরি আনতে না পারি, তাহলে ফাঁকা বুলি দিয়ে লাভ কী হতো?’
এবি