ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ইলিয়াস জাভেদকে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারসহ নানা রকম অসুখে ভুগছেন।
আজ বুুুুুুুুুুুুুুুুুুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সনি রহমান।
তিনি জানান, ঢাকাই সিনেমার সোনালি দিনের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস জাভেদ বেশ কয়েক মাস ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
সনি বলেন, ‘অভিনেতা জাভেদ ভাই ক্যানসারে আক্রান্ত। এছাড়াও নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। আজ হঠাৎ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত বাসার নিকটতম উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে।
মানুষ যেন হাসপাতালে ভিড় না করে, এ জন্য হাসপাতালের নাম গোপন রাখার কথাও জানান সনি রহমান। তিনি বলেন, আমি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে উনার স্ত্রী সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং যোগাযোগ রাখছি। আর আমি সব সময় চেষ্টা করবো আপডেট দিতে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে উনার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যে কোনো প্রয়োজনে আমরা পাশে আছি।’
ইলিয়াস জাভেদের জন্ম ১৯৪৬ সালে ভারতের গুজরাটে। পড়াশোনার পাশাপাশি জাভেদ নৃত্যচর্চার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা জাভেদ শৈশব থেকেই অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, বেশিরভাগ সময়ই তিনি সিনেমা দেখা আর গান শোনা নিয়েই মগ্ন থাকতেন। আর এসব নিয়ে পরিবারের সাথে মনমালিন্য হতে থাকলে তিনি তার বাবা-মাকে না বলেই জন্মস্থান গুজরাট ছেড়ে চলে আসেন সে-সময়ের পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) ঢাকায়।
সেটা ছিল ১৯৬৩ সালের কথা, ঢাকায় তখন বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নিয়মিত উর্দু ছবিও নির্মিত হতো, কিন্তু প্রথমদিকে অভিনয়ে সুযোগ না পেয়ে জাভেদ চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালনার কাজ শুরু করেন। তার চলচ্চিত্রে প্রথম নৃত্য-পরিচালনা ছিলো ১৯৬৪ সালে কায়সার পাশার পরিচালনায় উর্দু ছবি ‘মালান’। এর প্রায় তিন বছর পর ১৯৬৭ সালে ‘পুনম কি রাত’ উর্দু ছবিতে আবার নৃত্য পরিচালনা করেন তিনি। তবে এরপর আর থেমে থাকেননি, সত্তর থেকে আশির দশক পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ছবিতে নিয়মিত নৃত্য পরিচালনা করেন। সেক্ষেত্রে তিনি তখন ইলিয়াস নামেই নৃত্য পরিচালনা করতেন।
১৯৬৩ সালে ঢাকার চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র ‘নয়ি জিন্দেগি’ দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। নায়ক হিসেবে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন শতাধিক চলচ্চিত্রে। তার অনেক কাজের মধ্যে ‘দোস্ত দুশমন’, ‘অন্ধ প্রেম’, এবং ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’ চলচ্চিত্রের জন্য বেশি পরিচিত। তার অভিনয় জীবনের সেরা সাফল্য আসে ‘নিশান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে।
সমসাময়িক অনেক নায়িকার সঙ্গেই তিনি জুটি হয়ে কাজ করেছেন। তবে অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে তার জুটি ছিল সুপার ডুপার হিট।
আশির দশকে জাভেদ ভালোবেসে বিয়ে করেন নায়িকা ডলিকে। দুজনে মিলে উত্তরায় বাস করছেন দীর্ঘ দিন ধরে।
এইচএ