এইমাত্র
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় আরও ২ জন আটক
  • প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় উপদেষ্টার দপ্তরের নির্দেশে তদন্ত শুরু
  • সাবেক বিচারপতি মেজবাহ উদ্দিন মারা গেছেন
  • বাসভবন-কার্যালয় প্রস্তুত, সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন তারেক রহমান
  • ফটিকছড়িতে অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা-কৃষি জমি, হুমকিতে পরিবেশ
  • আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ
  • মেসি-শচীনের ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ, উপহার বিনিময়
  • ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় মামলা
  • হাবিবুরসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শুরু আজ
  • বাংলাদেশি শান্তিকর্মীদের ওপর হামলা, সুদানকে সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
  • আজ সোমবার, ১ পৌষ, ১৪৩২ | ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    ‘কেরামতি’র আড়ালে ক্যারিয়ারের কলঙ্ক, শ্রীপুর বিএনপিতে শাহজাহান বিতর্ক তুঙ্গে

    উপজেলা করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম
    উপজেলা করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

    ‘কেরামতি’র আড়ালে ক্যারিয়ারের কলঙ্ক, শ্রীপুর বিএনপিতে শাহজাহান বিতর্ক তুঙ্গে

    উপজেলা করেসপন্ডেন্ট প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

    শাহজাহান ফকির এখন আর একজন রাজনৈতিক নেতা নন, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির অপরাধচক্রের প্রতীক। জাল সনদ, কোটি টাকার দুর্নীতি, দলবিরোধী আঁতাত ও মামলার খসড়া বাণিজ্য—সব মিলে তিনি দলকে নিয়ে গেছেন বিশ্বাসঘাতকতার সীমায়।

    অথচ বিএনপির “দল বড়, ব্যক্তি নয়” মূলনীতিকে তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আজও তাকে বহাল রেখেছে সভাপতির আসনে। তৃণমূলে এর প্রতিবাদ এখন ক্ষোভের বিস্ফোরণ।

    সার্টিফিকেট জালিয়াতি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে বসতে সবচেয়ে জঘন্য প্রতারণা করেন তিনি। ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম ফকির বরমী ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতির পদে থাকা শাহজাহান ফকিরের শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ফকির তার মনোনয়ন ফর্মে একটি ভুয়া স্নাতক ডিগ্রির সনদ জমা দিয়েছেন।

    পরবর্তীতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত চিঠিতে (স্মারক: আইএনএস ০২-১/০০২০১/২০১৭/৫৫১৫/৫৫৭৪) বিষয়টি সম্পূর্ণ সত্য প্রমাণিত হয় এবং তার পদচ্যুতির নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, “মো. শাহজাহান ফকির-এর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদটি সঠিক নয়, কমিটির সদস্য হিসেবে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে পদচ্যুত করার নির্দেশ দেওয়া হলো।” এটি একটি রাষ্ট্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক দলিল, যেখানে সনদ জালিয়াতি দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত।

    শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও রাজনীতিকে কলুষিত করা এ অপকর্ম জাতীয় পর্যায়ের একটি জঘন্যতম অপরাধ, যার দায়ে কেউ যদি এখনো রাজনৈতিক পদে বহাল থাকে, তবে সেটি শুধু দলীয় ব্যর্থতা নয়—দলের আদর্শিক আত্মহননের ইঙ্গিত।

    দুর্নীতির পাহাড়, আওয়ামী আঁতাত ও মামলার খসড়া বাণিজ্য শুধু সনদ জালিয়াতিই নয়—২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৩.৩৮ কোটি টাকার সড়ক প্রকল্পেও দুর্নীতির চূড়ান্ত নজির গড়েছেন তিনি। বিন্দুবাড়ি-ইজ্জতপুর সড়কের নির্মাণে বরাদ্দ প্রকল্প মূলত ছিল এক আওয়ামী লীগপন্থী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে, যা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফকির নিজের নামে নিয়ে নেন। এরপর শুরু হয় পোড়া মাটি, ভাঙা ইট, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণের মহোৎসব। উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ পত্তনদার কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও তিনি তা অমান্য করে অব্যাহত রাখেন।

    এছাড়া তার বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ফকির একাধিক মামলার খসড়া তৈরি করে তা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিনিময়ে টাকা আদায় করেন। অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী বলেছেন, যারা টাকা দিতে পারেননি, তারা এখন হয়রানিমূলক মামলার আসামি। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভা বর্জন করে তিনি যান হাটের টেন্ডার জমা দিতে। এই কর্মকাণ্ড ভাইরাল হলেও, দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি—এ যেন আরেক দৃষ্টান্ত ‘ফকিরের কেরামতির’।

    সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে ১১ আগস্ট ২০২৪—যখন সিংগারদিঘীর সী-গাল পার্কে তিনি গোপনে মিটিং করেন মাওনা ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকনের সঙ্গে। সেখানে বিএনপি নেতাদের হয়রানি না করার বিনিময়ে ১০ লাখ টাকার চুক্তি হয়, যার ৬ লাখ টাকা শাহজাহান ফকির নগদ গ্রহণ করেন। পরদিন, ফকির নিজেই আ.লীগের চেয়ারম্যান খোকনকে নিয়ে যান শ্রীপুর থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

    কেন্দ্রীয় ছাতার নিচে ফকিরের রক্ষা, তৃণমূলে ক্ষোভ শাহজাহান ফকিরের এই অপরাধ প্রবণতা ধামাচাপা দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ—রাজনৈতিক আত্মীয়তা। তার চাচাতো ভাই ডা. শহিদুল্লাহ ফকির বিবাহ করেছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম-এর বোনকে। এই আত্মীয়তার ছায়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ইশারায় জেলা পর্যায়ে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি তৃণমূলের। 'গাজীপুর জেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ এস এম রফিকুল ইসলাম'কে একাধিকবার ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি'।

    সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তৃণমূল বিএনপির নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “শুধু ‘অপেক্ষা’ বলে তাকে রক্ষা করা মানেই বিএনপির ভিতরে দুর্বৃত্তদের ছত্রছায়া দেওয়া হচ্ছে। শাহজাহান ফকির নামক ভাইরাসকে নির্মূল না করলে বিএনপি শুধু গাজীপুর নয়, গোটা দেশে জনআস্থা হারাবে।”

    একজন প্রমাণিত সনদ জালিয়াত, টেন্ডার ব্যবসায়ী, ফ্যাসিস্ট শাসকদলের সঙ্গে আঁতাতে লিপ্ত ব্যক্তি যদি এখনো বিএনপির মতো একটি দলের শীর্ষ পদে বহাল থাকে—তবে সেটি শুধু একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়, পুরো দলের ভিতরের নৈতিকতা ধ্বংসের ভয়ঙ্কর উপসর্গ। এই মুহূর্তে জেলা বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—আদর্শ রক্ষা না আত্মীয়তা রক্ষা? জবাব দিতে হবে এখনই। না হলে ইতিহাস কোনো দিন ক্ষমা করবে না।” জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন বলেন: “আমরা বিষয়টি জানি। জাল সার্টিফিকেট প্রসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো দলীয়ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।”

    এমআর

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…