সূর্য ওঠার আগ থেকেই শ্রমজীবী মানুষ ছুটে আসেন হাটে। চোখমুখে তাদের অসহায়তার ছাপ। যাদের শ্রম বিক্রি করে সংসারের প্রয়োজন মেটাতে দরকার কিছু টাকার। হাটটিতে কিছু মানুষ আসেন নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে, আরেক শ্রেণির মানুষ আসেন তাদের শ্রম কিনতে। চলতে থাকে দরদাম, পণ্যের মতোই মৌসুম বিবেচনায় তাদের দামও ওঠানামা করে।
এমনি এক হাট হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বালুঘাটা শ্রম বিক্রির হাট। এখানে প্রতিদিন মিলছে গেরস্থের ধানকাটার শ্রমিক। গৃহস্থদের কাজ সম্পন্ন করার চুক্তিতে কাজে নিচ্ছে, আবার অনেকেই দৈনিক হাজিরা ভিত্তিত্বে কাজে নিচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় এই হাটকে কামলার হাট বলা হয়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিজেদের যেন এভাবেই বেচে দিচ্ছেন তারা!
সরেজমিনে বালুঘাটা শ্রমিক হাট ঘুরে দেখা গেছে এ হাটে জামালপুর, শেরপুর ও নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে এ হাটে ধানকাটার শ্রমিক জড়ো হন। প্রতিদিন শতশত শ্রমিক বেচাকেনা হয়ে থাকে। ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত একেকজন শ্রমিকের দাম উঠে। বেচাকেনা পর ওই সব শ্রমিক চাষীর বাড়ির সঙ্গে চলে যাচ্ছেন। আর চাষীরাই এসব শ্রমিকদের থাকা—খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন।
শেরপুর সদরের খোজিউরা গ্রাম থেকে আসা কৃষিশ্রমিক হানিফ মিয়া (৩৮) বলেন, আমাদের এলাকায় কাজ কম। যে কাজ আছে তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই এ এলাকায় ধানকাটা কাজের সন্ধানে এসেছি। হাটের পাশেই বালুঘাটা এলাকায় এক গৃহস্থের বাড়িতে ৬০০ টাকায় দিন হাজিরায় ধান কাটতে যাচ্ছি। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দৈনিক হাজিরায় কাজ করেছি। কিন্ত এখন আকাশ পরিস্কার থাকায় ঝড়-বৃষ্টি কমে গেছে। তাই আমাদের মজুরিও কমে গেছে।
কৃষি শ্রমিক শেখ ফরিদ, রমজান আলী ও জলির মিয়ার ভাষ্য, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ধান কাটার কাজ চলছে। প্রচণ্ড রোদে পরিশ্রম বেশি। সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। মজুরি কম দিলে পোষায় না। তাদের মতে, দৈনিক অন্তত এক হাজার টাকা হলেই তারা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
উত্তর নাকশী এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, আবাদ করতে অনেক খরচ। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। কিন্তু ধানের দাম কম হওয়ায় বেকায়দায় রয়েছি আমরা।’ তাঁর দাবি, শ্রমিকের মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে। খাবার দিতে হচ্ছে দুই বেলা। পক্ষান্তরে প্রকারভেদে প্রতিমণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা দরে|
কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ২৩ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৯৯২ হেক্টর। ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে তা কতটুকু হবে-তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।
কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ৫০ ভাগ ভর্তুকিতে ৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে, যা দিয়ে কৃষক ধানকাটতে পারবে।
এআই