চট্টগ্রামে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতের স্বাক্ষর ও সিলমোহর জাল করে ভুয়া হলফনামা তৈরির অভিযোগে করা মামলায় আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন ও কম্পিউটার অপারেটর সুমন দে’র দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু বকর সিদ্দিক এই রিমান্ড আদেশ দেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আজহার সময়ের কণ্ঠস্বর-কে জানান, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনের স্বার্থে আদালতের কাছে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত তা আমলে নিয়ে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৮ মার্চ, যখন অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের নামে ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে একটি জাল হলফনামা তৈরির অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ। এতে রোজী আক্তার নামের এক নারীসহ অজ্ঞাত চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৩ মার্চ আদালতের একজন আইনজীবীর মোবাইলে প্রাপ্ত একটি হলফনামা যাচাই করতে গিয়ে নাজির আবুল কালাম আজাদ নথির অসামঞ্জস্যতা দেখতে পান। ক্রমিক নম্বর ১৩৮০/২৫ বহনকারী ওই হলফনামায় হলফকারী হিসেবে উল্লেখ ছিলেন রোজী আক্তার। অথচ আদালতের মূল রেজিস্টার খাতায় একই ক্রমিক নম্বরে নথিভুক্ত রয়েছেন ইয়ামিন রহমান নামে এক ভিন্ন ব্যক্তি।
জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ওই হলফনামাটি ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) একটি কার্যক্রমে দাখিল করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। নেজারত শাখা থেকে বিষয়টি বিচারক সরকার হাসান শাহরিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সুস্পষ্টভাবে জানান, হলফনামায় ব্যবহৃত সিলমোহর ও স্বাক্ষর তার নয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, রোজী আক্তার ও তার সহযোগীরা পরস্পর যোগসাজশে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের বিভিন্ন আদালতের পাঁচটি ভুয়া সিল, তিনটি জাল স্বাক্ষর এবং ভুয়া ক্রমিক নম্বর ব্যবহার করে একাধিক হলফনামা প্রস্তুত করেন।
তদন্তে নামে পুলিশ এবং ২২ মার্চ রোজী আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ উদ্দিন স্বীকার করেন, প্রত্যাশী ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহ করে কম্পিউটার দোকানদার সুমন দে’র কাছে যান। সেখানে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ভুয়া হলফনামা প্রিন্ট করা হয়।
তদন্তে আরও জানা যায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের নামে পাঁচটি জাল সিলমোহর বানিয়ে বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে হলফনামাটি তৈরি করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর সুমন দে’র কাছ থেকেও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। একই মামলায় নয়ন দে নামে আরেকজনকে আগেই গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। পুলিশ বলছে, এই চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনআই