জীর্ণশীর্ণ কুঁড়েঘরে অনাহারে–অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছিলেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের মতিয়ার ও রহিমা বেগম দম্পতি। দীর্ঘদিন ধরে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে গেলেও তাদের অসহায় জীবনের খবর কারও নজরে আসেনি। শীতের রাতে ফুটো ঘর, দিনের বেলায় খালি হাঁড়ি—এভাবেই কেটেছে তাদের প্রতিটি দিন। অবশেষে শেষ হচ্ছে তাদের সেই দিন, মানবতার গল্পে বদলে গেছে তাদের দিন।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবতার সেবায় সোহেল’-এর সেবক সোহেল ক্ষ্যাপার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টের মাধ্যমে তাদের অসহায়ত্ব চোখে পড়ে উপজেলা প্রশাসনের। এরপরই তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে উপজেলা প্রশাসন। মিলেছে খাবার সহায়তা, বাসস্থান নির্মাণের জন্য টিন এবং নগদ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ। এছাড়াও সংগঠনটির উদ্যোগে আরও ৫৫ হাজার টাকা সহযোগিতা সংগ্রহ করা হয়, নির্মাণ করে দেওয়া হয় একটি নতুন ঘর।
জানা গেছে, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবতার সেবায় সোহেল’-এর সেবক সোহেল ক্ষ্যাপা মতিয়ার ও রহিমা বেগম দম্পতির দুর্দশার ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেন। মুহূর্তেই সেটি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুব হাসানের। সঙ্গে সঙ্গে মানবিক উদ্যোগ নেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে ওই দম্পতির জন্য খাবার সহায়তা, বাসস্থান নির্মাণের জন্য টিন এবং নগদ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন।
সরেজমিনে উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের চর নিকলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অসহায় ওই বয়স্ক দম্পতির একটি ভাঙা ঘরে বসবাস। ঘরটিতে নেই কোনো জানালা, দাঁড়ানোর মতো জায়গাও নেই। মাথা তুললেই চালায় ঠেকে যায়। দিনের বেশিরভাগ সময় অন্ধকারেই কাটে তাদের জীবন। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা নিয়মিত খোঁজ নিতে পারেন না। ছেলেরাও আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বাবা–মায়ের দায়িত্ব নিতে পারছেন না বলে জানান এলাকাবাসী।
অবশেষে একটি ফেসবুক পোস্ট বদলে দেয় এই দম্পতির ভাগ্য। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবতার সেবায় সোহেল’-এর সেবক সোহেল ক্ষ্যাপা তাদের দুর্দশার ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন। মুহূর্তেই সেটি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুব হাসানের। তিনি ওই দম্পতির জন্য খাবার সহায়তা, বাসস্থান নির্মাণের জন্য টিন এবং নগদ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন।
শুধু তাই নয়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সদস্যদের উদ্যোগে আরও ৫৫ হাজার টাকা সহযোগিতা সংগ্রহ করা হয়। দীর্ঘদিনের কষ্ট ও দুর্দশা পেরিয়ে অবশেষে মতিয়ার–রহিমা দম্পতির জন্য নির্মিত হয় একটি নতুন ঘর—একটি নিরাপদ মাথা গোঁজার ঠাঁই।
স্থানীয় লালন অনুরাগী রফিকুল ইসলাম বলেন, “মতিয়ারের একসময় সবই ছিল। ভাগ্যের কাছে হেরে আজ তিনি নিঃস্ব। কোনো দিন খাবার জোটে, কোনো দিন জোটে না। সোহেল ক্ষ্যাপা নিয়মিত খোঁজ নিতেন। এবার তার উদ্যোগেই প্রবাসীদের সহযোগিতায় একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।”
‘মানবতার সেবায় সোহেল’ পেইজের অ্যাডমিন সোহেল ক্ষ্যাপা বলেন, “এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি তাদের অসহায়ত্বের খবর পাই। সরেজমিনে গিয়ে দেখে ছবি তুলে ফেসবুক পেইজে পোস্ট করি। সঙ্গে সঙ্গে ইউএনও স্যার বিষয়টি দেখেন এবং এসে খাবার, টিন ও নগদ সহায়তা দেন। প্রবাসী ভাই–বোনদের সহযোগিতায় মোট ৫৫ হাজার টাকায় আমরা ঘরটি নির্মাণ করি। এখন তারা নিরাপদে থাকতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষের জন্য সামান্য কিছু করতে পেরে আমি আনন্দিত। মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা বিরাজমান। আমি কিছু করিনি—শুধু তার আদেশ পালন করেছি।”
নতুন ঘরে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞ চোখে তাকিয়ে মতিয়ার ও রহিমা বেগম বলেন, “আমরা ভাবতেই পারিনি কেউ আমাদের কথা শুনবে। আল্লাহ সোহেল ভাইয়ের মাধ্যমে আমাদের ঘর দিয়েছেন।”
স্থানীয়দের মতে, একজন স্বেচ্ছাসেবকের ফেসবুক পোস্ট, স্বেচ্ছাসেবীদের দৌড়ঝাঁপ এবং ইউএনও’র দ্রুত মানবিক উদ্যোগ—সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে একটি অসহায় পরিবারের পুনর্জন্মের গল্প।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব হাসান বলেন, “খবর পেয়ে গিয়ে দেখি তারা বসবাসের অনুপযোগী ঘরে থাকছেন। তখনই তাৎক্ষণিক খাবার সহায়তা ও টিন দেওয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে আরও ৫৫ হাজার টাকা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।”
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”
ইখা