এইমাত্র
  • পুলিশকে জিম্মি করে জেল পালালো ১৯ বন্দী
  • বরগুনায় নদীর তীরে আটকে আছে অর্ধগলিত তিমি
  • চুয়াডাঙ্গায় অসুস্থ গাভী গরু জবাই করে মাংস বিক্রি: ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
  • বর্ষাকালে ঘরের স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করবেন যেভাবে
  • অভিজ্ঞতা ছাড়াই চাকরি দিচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
  • কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বেরোবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
  • মাটন মোতি পোলাও রেসিপি
  • উলিপুরে নদী ভাঙন কবলিত পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ
  • ঝিনাইদহে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ
  • ধর্ষণ মামলায় জামিন পেল প্রিন্স মামুন
  • আজ সোমবার, ১৭ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১ জুলাই, ২০২৪
    ফিচার

    যেভাবে এলো বাঙালির জনপ্রিয় খাবার সিঙাড়া

    ফিচার ডেস্ক প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
    ফিচার ডেস্ক প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম

    যেভাবে এলো বাঙালির জনপ্রিয় খাবার সিঙাড়া

    ফিচার ডেস্ক প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম

    বাঙালি ও ভারতীয় উপমহাদেশে সিঙাড়া অতি জনপ্রিয় ও সুস্বাদু খাবার। নাস্তায় বা হালকা খাবার হিসেবে সিঙাড়ার জুড়ি নেই। কিন্তু এই যে বিপুল জনপ্রিয় এই সিঙ্গারা যে আমরা খাই, এর জন্ম ও ইতিহাস সম্পর্কে কখনো কি ভিবেছেন কিভাবে এলো এই খাবারটি। ১৭৬৬ সালে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার রাজ-হালুইকর, কলিঙ্গ তথা বর্তমান ওড়িষ্যা থেকে আগত গুণীনাথ হালুইকরের ষষ্ঠপুত্র গিরীধারী হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী দেবী আবিষ্কার করেছিলেন এই সিঙাড়া।

    ঠান্ডা লুচি বারংবার ফেরত পাঠানোয় রাজবাড়ির হালুইকর (পাচক) অনুমতি চেয়েছিলেন রাজসভায় মিষ্টান্ন পাঠাতে। রাজচিকিৎসকের পরামর্শে মধুমেহ (ডায়াবেটিস) রোগাক্রান্ত রাজা অগ্নিশর্মা হয়ে শূলে চড়ানোর হুকুম দিয়েছিলেন হালুইকরকে। অনেক অনুনয় বিনয় করে নিজের প্রাণ রক্ষা করলেন হালুইকর।

    কিন্তু রাজা আদেশ দিয়েছেন, হালুইকরকে তিনরাত্রের মধ্যে দেশত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয় রাত্রে হালুইকরের স্ত্রী ঠিক করেছে দেশত্যাগের আগে একবার দেখা করবে রাজার সাথে। সেইমতো তৃতীয় দিন সকালবেলা রাজদরবারে এসে প্রণাম জানালো স্বয়ং রাজামশাইকে।

    রাজসভায় আসার কারণ জিজ্ঞেস করলে হালুইকরের স্ত্রী রাজাকে জানায়, সে নাকি এমনভাবে লুচি তরকারি করতে পারে, যা রাজা আধঘণ্টা বাদে খেলেও গরম পাবেন। এ জাতীয় লুচি এবং তরকারি নাকি কিছুক্ষণ বাদে খাওয়াই উত্তম। সন্দিহান রাজা কিঞ্চিৎ কৌতূহলী হয়ে হালুইকরের স্ত্রীকে পাঠালেন পাকশালে। জানিয়ে দিলেন যখন রাজসভা থেকে খবর যাবে তৎক্ষণাৎ খাবার পৌঁছানো চাই।

    হালুইকরের স্ত্রী মৃদু হেসে মহারাজকে জানালো, খাদ্যদ্রব্য রাজসভায় তৎক্ষণাৎই পৌঁছাবে, কিন্তু অনুগ্রহ করে তিনি যেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খান। অন্যথায় মহামান্য রাজার জিহ্বা পুড়ে যেতে পারে। বিস্মিত মহারাজের সামনে দিয়ে হাস্যমুখে হালুইকরের স্ত্রী চলে গেল পাকশালে।

    রাজ পাচক আলুর তরকারি তৈরি করে পাকশালে দাঁড়িয়ে কাঁপছেন, হুকুম এলেই লুচি ভাজতে হবে। ময়দার তাল মাখা রয়েছে হাতের সামনে। হালুইকরের স্ত্রী পাচককে কটাক্ষ করে বসলো ময়দার তাল নিয়ে। লেচি কেটে লুচি বেলে, কাঁচা ময়দার ভেতর লুচির জন্য তৈরি সাধারণ তরকারি ভরে দিয়ে, সমভুজাকৃতি ত্রিভুজের গড়ন বানিয়ে আড়ষ্ঠ রাজ পাচকের সামনে নিজের আঁচল সামলে শুরু করলো চটুল গল্প।

    রাজা আসতেই তরকারির পুর ভর্তি দশটি ত্রিভুজাকৃতি লুচির ময়দা ফুটন্ত ঘি ভর্তি কড়াইয়ে ফেলে দিয়ে, নিমেষের মধ্যে সোনালি রঙের ত্রিভুজগুলি তুলে নিয়ে স্বর্ণথালায় সাজিয়ে নিজেই চলল রাজসভায়। মহারাজ এরূপ অদ্ভুত দর্শন খাদ্যবস্তু দেখে স্তম্ভিত।

    হালুইকরের স্ত্রী অত্যন্ত বিনীতভাবে জানালো, খাদ্যদ্রব্যটির নাম সমভুজা। মহারাজ যেন সম্পূর্ণ বস্তুটি মুখে না ঢুকিয়ে একটি কামড় দিয়ে দেখেন, ঠাণ্ডা না গরম এবং অনুগ্রহ করে স্বাদটি জানান। মহারাজ স্বাদ জানাননি। তিনি তিনছড়া মুক্তো মালা খুলে হালুইকরের স্ত্রীয়ের হাতে দিলেন আর রাজবাড়ির হালুইকরের দণ্ডাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেন। প্রায় ছ'মাস পর হেসে ওঠেন মহারাজ, শান্তি পেলো প্রজাকুল।

    মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি রামপ্রসাদ, স্বয়ং সন্ধ্যাহ্নিক সেরে প্রতিসন্ধ্যায় বসতেন একথালা সিঙাড়া নিয়ে। দোলপূর্ণিমার সন্ধ্যায়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দরবার থেকে বাইশটি সুসজ্জিত হস্তী ভেট নিয়ে গিয়েছিল উমিচাঁদের কাছে; বাইশটি স্বর্ণথালা ভর্তি বাইশশোটি সিঙাড়া।

    ভারতীয় খাদ্য হিসেবে সিঙ্গাড়ার সাথে রবার্ট ক্লাইভের প্রথম সাক্ষাৎ হয়, এই মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রেরই সৌজন্যে। সিঙ্গাড়ার জন্য ইতিহাস স্বীকৃতি দিয়েছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে, ভুলে গেছে হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী বেহারার নাম। ধরিত্রীদেবী সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন এই অসাধারণ খাদ্যদ্রব্যটির, যেটি সেই ১৭৬৬ সাল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা তথা সারা ভারতে।

    ঐতিহাসিকদের মতে, নবম শতাব্দীতে পারস্যের অধিবাসীরা যব এবং ময়দার তালের সঙ্গে গাজর কড়াইশুঁটি রসুন ও মাংস মেখে সেঁকে খেত, যাকে বর্তমান সিঙ্গাড়ার জনক হিসাবে ধরা হলেও, সুদূর পারস্য থেকে ভারতবর্ষে এসেও তাঁরা ময়দার তালে মাংসের কুঁচি ঢুকিয়ে সেঁকেই খেতেন।

    এরও বহু পরে তারা ভারতবর্ষের উত্তরপূর্ব উপকূলে বিভিন্ন মশলা সহযোগে তৈরি আলুর তরকারি, ময়দার ভেতর ঢুকিয়ে ঘিয়ে ভাজার পদ্ধতিতে চমৎকৃত হন। শহুরে অভিজাত পরিবারের বৈঠকখানায় মোটা গদির সোফায় বসা অতিথির থালাই হোক বা প্রত্যন্ত গ্রামের জরাজীর্ণ চায়ের দোকানের সামনে নড়বড়ে বাঁশের বেঞ্চে রাখা তেলচিটে কালো ভাঙা বেতের চুবড়ি হোক কিংবা বিকেল সাড়ে চারটেই হোক বা সকাল পৌনে দশটা, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রধান হালুইকরের স্ত্রীর উদ্ভাবনটি সর্বত্র সর্বদা সর্বগামী।

    সিঙাড়ার জন্ম নিয়ে মতান্তর এবং বিতর্ক থাকলেও ভারতীয় উপমহাদেশে আসার পর যে এর স্বাদ আর উপকরণে আমূল পরিবর্তন এসেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই! যেমন- ষোড়শ শতকে পর্তুগিজরা ভারতের মাটিতে পা রাখার পর এ দেশের মানুষের পরিচয় হয় ‘আলু’ নামের চমৎকার এক সবজির সঙ্গে।

    এবি

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    সর্বশেষ প্রকাশিত

    Loading…