সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে পৃথক স্থানে মাদকাসক্ত ২ যুবকের গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার কৈজুরী ও গালা ইউনিয়নে আত্মহত্যার ২টি ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর ভাঙ্গা গ্রামের কৃষক মো. আব্দুস সামাদের ছেলে শ্রমিক আবু দাউদ (১৮) ও গালা ইউনিয়নের গালা পূর্ব পাড়ার কৃষক মো. তোফাজ্জল প্রাথমিকের ছেলে ভ্যানচালক আজিম প্রামাণিক (২২)।
উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের গোপালপুর ভাঙ্গা গ্রামের মৃত আবু দাউদের পিতা আব্দুস সামাদ জানান, শুক্রবার রাত আনুমানিক ৯টায় ছেলের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া শেষে দাউদ তার শয়ন কক্ষে ঘুমাতে যায়। পরে তিনি যমুনা নদীতে মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েন। সকালে আব্দুস সামাদ বাড়িতে ফিরে ছেলেকে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে পাশের কক্ষ থেকে উঁকি দিয়ে দেখতে পান ঘরের তীরের সাথে গলায় রশি লাগানো দাউদের দেহ ঝুলছে। পরে রুমে প্রবেশ করে বাড়ির সদস্যদের সহযোগিতায় আবু দাউদের ঝুলন্ত দেহ নামানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পেশায় শ্রমিক আবু দাউদ একজন মাদকসেবী ছিল। নেশার টাকার জন্য পরিবারকে চাপ দিলে তারা অস্বীকৃতি জানালে অভিমানে সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।
অপরদিকে গালা ইউনিয়নের গালা পূর্বপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল প্রাথমিকের মাদকাসক্ত ছেলে আজিম প্রামাণিক (২২) গভীর রাতে প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ঢুকে ধরা পরার পর বিচারের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা ও লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে।
জানা যায়, ভ্যানচালক আজিম ৪ বছর পূর্বে বিয়ে করলেও তার কোন সন্তান না হওয়ায় স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের পর সে এক মাস পূর্বে বাবাব বাড়ি চলে যায়। অপরদিকে আজিম বাবা মায়ের উপরেও অত্যাচার ও তাদের মারধর করতো।
গতকাল শুক্রবার রাত আনুমানিক ১২টায় আজিম প্রতিবেশী মালয়েশিয়া প্রবাসী রুবেল শেখ এর স্ত্রীর ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলে বাড়ির লোকজন তাকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে অভিযুক্ত আজিমের বাড়ির লোকজন উপযুক্ত বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
মৃত আজিমের মা রঞ্জিদা খাতুন বলেন, আজ দুপুরে স্থানীয় বাজার থেকে ফিরে আজিম নিজ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে তার ফুপু খাবার নিয়ে ডাকাডাকি করলে তার কোন সারা পাওয়া না গেলে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে আজিমের ঝুলন্ত দেহ দেখা যায়। পরে বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা গিয়ে এসে আজিমের ঝুলন্ত দেহ নামানো হয়।
তিনি আরো জানান, আজিম মাঝে মধ্যেই বাবা-মাকে মারধর করতো। গতকাল তার বাবাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল।
খবর পেয়ে উভয় আত্মহত্যার ঘটনাস্থলে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম ইসলাম, পরিদর্শক অপারেশন আবু সাঈদ ও উপ-পরিদর্শক মুন্তাজ আলীসহ থানা পুলিশের একটি দল পরিদর্শন করেন।
এই বিষয়ে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম ইসলাম বলেন, আত্মহত্যার খবর পেয়ে বেলা ১১টায় আমরা গোপালপুর ভাঙায় উপস্থিত হই। কোন অভিযোগ না থাকায় ও পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আবু দাউদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পরে আমাদের কাছে গালায় আরো একটি আত্মহত্যার খবর আসে। বেলা ২টার দিকে সেখানে উপস্থিত হয়ে মৃত আজিম প্রামাণিকের লাশের সুরতহাল করা হয়। পরে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আগামীকাল সিরাজগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।