শরতের শিশির ভেজা কাশফুলের সৌন্দর্যের আগমনীবার্তা দিয়ে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জগৎ জননী দেবীদূর্গা। আগামী মঙ্গলবার পঞ্চমী তিথিতে কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসছেন সপরিবারে দেবীদূর্গা। তারই আগমনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা। দেবীর প্রতিমা তৈরি করতে মুন্সিগঞ্জের জেলার ৬টি উপজেলা গুলোতে প্রায় ৩ মাস আগে থেকেই ব্যস্ত হয়ে পরেছেন প্রতিমা তৈরি শিল্পীরা।
এ বছর জেলায় ৩৩৮টি মন্ডপে দেবী দূর্গার পূজা হবে। মাটির কাজ শেষ করে, এখন চলছে প্রতিমার রং-তুলির কাজ। দেবী দূর্গার প্রতিমা সাজাতে রং-তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন দিনরাত প্রতিমা শিল্পীরা।
সরেজমিন জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, বরাবরের মতো এবারো মন্ডপ গুলোতে প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা রং-তুলির আচড়ে দেবীকে সাজাচ্ছে। দেবী দূর্গার সাথে আসছেন তার ৪ সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশও। দেব-দেবীকে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি ও পোশাক পরিধান সহ প্রতিমা সাজাতে দিন রাত পরিশ্রম করছেন প্রতিমা শিল্পিরা। তার সাথে সাথে বিভিন্ন মন্ডপগুলোতে ডেকোরেশনের কাপড়ে ও বিভিন্ন ধরনের লাইটিং করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন পূজা মন্ডপ কমিটি।
এতে জেলা জুরেই চলছে পূজার জোর প্রস্তুতি। প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করে বেশ কয়েকটি মন্ডপের প্রতিমা রং করার কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো অনেক মন্ডপে বাকী রয়েছে রং-তুলির শেষ আচড়। শিল্পীদের নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় সাজবে দেবী দূর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, শিব, অসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরদের ব্যস্ততায় জানান দিচ্ছে দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা।
দূর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও বিরাজ করছে নতুন পোশাক কেনার ধুম। অন্যান্য বছরের মতো জেলা শহরের মার্কেট গুলোতে তেমন কেনাকাটার ভির দেখা না গেলেও কেউ কেউ কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কেউবা বাড়ি ও আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার করছেন।
এর আগে গত বুধবার ভোর সাড়ে ৫টায় মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। দূর্গাপুজা উপলক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত। উলুধ্বনী কাশর ঘন্টা ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আগামী মঙ্গলবার শুক্লাপঞ্চমী পূজা দিয়ে শুরু হবে দেবী
দূর্গার বোধন।
বুধবার ষষ্টীপূজা, বৃহস্পতিবার সপ্তমী, শুক্রবার অষ্টমী, শনিবার নবমী ও একই তারিখে দশমী পূজার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে দেবীর পূজানুষ্ঠান। প্রতিটি দিনেই দেব দেবীদের পূজার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রসাদের ব্যবস্থা। তবে এ পর্যন্ত দূর্গা পূজার প্রস্তুতিতে জেলায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সদর উপজেলার রুহিতপুর পুজা মন্ডপের সাধারন সম্পাদক শ্রী গণেশ মন্ডল বলেন, আমাদের মন্ডপের প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। এখন ডেকোরেটরের কাজ ও লাইটিংয়ের কাজ বাকি আছে। পূজার আগেই সব কাজ পরিপুর্ন হবে।
একই মন্ডপের দপ্তর সম্পাদক অজয় পাল ও সহ-দপ্তর সম্পাদক অনুপ সরকার জানান, সরকার পরিবর্তনের পর হতে নিয়মিত পূজা মন্ডপ দিনে ও রাতে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন তারা এবং ভালোভাবেই পূজা করতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।
জেলা হিন্দু-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অজয় কুমার চক্রবর্তী জানান, এ বছর জেলায় ৩৩৮ টি মন্ডপে দূর্গাপূজা হবে। দূর্গাপূজা সামনে রেখে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। এ পর্যন্ত জেলায় দুর্গাপুজার মন্ডপে গুলোতে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন, শুক্রবার সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ আমি পরিদর্শন করেছি। পূজার আগে ও পরে আমিসহ আমার অন্যান্য অফিসার জেলার পূজা মন্ডপ গুলো পরিদর্শন করবে। এখনো পর্যন্ত জেলায় কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পূজা মন্ডপ গুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
এমআর