মাংস খেতে কম বেশি সবাই পছন্দ করে। বিশেষ করে রেড মিটের প্রতি বেশিরভাগ মানুষের বাড়তি আকর্ষণ। গরু, ছাগল, খাসি অথবা উটের মাংস মূলত রেড মিট। এই মাংসে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল থাকে। যার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। তবে রান্নার পদ্ধতির ওপরেও নির্ভর করছে আপনি এ থেকে কতটুকু উপকার পাচ্ছেন সেটি। কিছু গবেষণা বলছে, মাংস রান্নার পদ্ধতি স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু পদ্ধতিতে লাল মাংস রান্না করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই রেড মিট রান্না করতে হবে স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে।
গরুর মাংস হচ্ছে উচ্চমানের প্রোটিন। প্রোটিন ছাড়াও আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাট, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, বি১২, আয়রন, জিংক, ফসফরাস ও গ্লুটাথিওন মেলে গরুর মাংস থেকে। কিন্তু মাংস কীভাবে রান্না করা হচ্ছে তার ভিত্তিতে এটা অস্বাস্থ্যকরও হতে পারে, তৈরি করতে পারে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি। তাই ঝুঁকি এড়াতে এখানে মাংস রান্নার স্বাস্থ্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো।
তাপমাত্রা খেয়াল রাখুন: উচ্চ তাপে মাংস রান্না করলে এতে হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস ও পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়। এসব কেমিক্যাল কম্পাউন্ড ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। গবেষণায় কিডনি ক্যানসার, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসারের সঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নাকৃত মাংসের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। মাংসের ধরন ও কাটার ধরনের ওপর আদর্শ তাপমাত্রা ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন গরুর মাংসের স্টিক বা রোস্ট রান্নার জন্য আদর্শ তাপমাত্রা হলো ১৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
চর্বিহীন মাংস গ্রিলিং করুন: গ্রিলিং করে খেতে চাইলে চর্বিহীন মাংস বেছে নিন। গবেষণায় দেখা গেছে, চর্বিবহুল মাংস গ্রিলিং করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। চর্বিবহুল মাংস গ্রিলিং করা হলে পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বনস নামক কার্সিনোজেন উৎপন্ন হয়। মাংসের চর্বি গলে গ্রিলের ওপর পড়ে ও আগুনের আঁচ বেড়ে কার্সিনোজেনটি তৈরি হয়, যা ধোঁয়ার মাধ্যমে মাংসের ওপর লেগে থাকে। অন্যদিকে চর্বিহীন মাংস গ্রিলিং করলে এমন কিছুর সুযোগ নেই বললেই চলে।
মাংস পোড়ানো থেকে বিরত থাকুন: পোড়া মাংসের স্বাদ যেমনই হোক, এটা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। মাংস যত পুড়বেন, ক্যানসারের ঝুঁকি তত বাড়বে। গবেষণায় দেখা গেছে, পোড়া মাংস বেশি খেলে শরীরে কার্সিনোজেন বেড়ে যায়। বিশেষ করে হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস। শরীরে যত কার্সিনোজেন প্রবেশ করবে, ক্যানসারের ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পাবে।
মসলা বাড়িয়ে দিন: কেবল স্বাদ বাড়াতে নয়, রোগের ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যেও মাংসে মসলার ব্যবহার বাড়াতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, মাংসে মসলার পরিমাণ বাড়ালে অথবা মসলা দিয়ে সিজনিং বা মেরিনেড করলে হিটেরোসাইক্লিক অ্যামাইনস কমে যায়। যার মানে হলো, ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যায়।
সবজি দিয়ে মাংস রাঁধুন: মাংস সবজি দিয়ে রান্না করতে পারেন। এতে মাংস কম খাওয়া হয়। পাশাপাশি পুষ্টিগুণও বেড়ে যায় রান্নার। এক্ষেত্রে মাশরুম অথবা আস্ত রসুন দিয়ে মাংস রান্না করতে পারেন। আবার মাংস রান্নায় লাউ, বাঁধাকপি, পেঁপে বা মিষ্টিকুমড়াও রাখতে পারেন।
এবি