আজ ১৫ নভেম্বর স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে উপকূল এই দিনে । ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনার পাথরঘাটা। আজ সিডরের ১৭ বছর হলে ও তান্ডবের কথা ভুলেনি উপকূলীয় পাথরঘাটা মানুষ। ১৫ মিনিটের তান্ডবে নিশ্চিহ্ন করে দেয় উপকূল। ১৭ বছর কেটে গেল ও মানুষের মন থেকে কাটেনি আতঙ্ক। এ ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে অনেক মানুষ। ১৭ বছরেও স্বাভাবিক হয়নি স্বজন ও সম্পদ হারানো মানুষের জীবন। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছ্বাসে পাথরঘাটার ৩৪৯ জনসহ রগুনা জেলায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মানুষ প্রাণ হারালো। ঝড়ের তাণ্ডবে পুরো এলাকা হয়ে যায় লণ্ডভণ্ড। সকালে উপকূলের মানুষ দেখতে পেলো কেয়ামতের আলামত। লাশের পর লাশ পড়েছিল উপকূলজুড়ে। কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায়নি। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া পাথরঘাটার ৯১ জন জেলেসহ এখনো নিখোঁজ রয়েছে বরগুনার ১৫৬ জেলের । বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন জানেনা তাঁদের স্ত্রী ও সন্তানরা। তারা এখনো রয়েছে অপেক্ষায় তাদের স্বজনদের। স্বজনরা পাইনি কোন মৃত্যু সনদ সেই কারণে পারছেনা কোন জমি জমা বিক্রি করতে। পাচ্ছে না কোন সরকারি সহায়তা।
বাবা মায়ের একমাত্র বেঁচে থাকা অবলম্বন ছেলে বাবু সেও মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে নেই তার কোন সন্ধান। সন্তানের শোকে বাবা অসুস্থ হয়ে বিছানায় দিন কাটাচ্ছে। সংসারে কোন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকার কারণে মা সালেহাকে মাছ শিকারে যেতে হয় নদীতে। কষ্টে কাটছে দিন
পাথরঘাটায় এরকম অনেকেই তাদের পরিবারের প্রধান কে হারিয়ে এখনো কষ্টে কাটছে তাদের দিন।
পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামে সিডরে রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে জন্ম নেয় একটি শিশু কন্যা তার নাম রাখে সবাই সিডর বেবী মারিয়া। সেই মারিয়ার কোলে এসেছে একটি ফুটফুটে সন্তান । ভালো নেই মারিয়া পাইনি কোন সরকারি সহায়তা অভাব অনটনে কাটছে তাদের জীবন। মারিয়ার সাথে কথা বললে এমনটা জানান তিনি।
সিডারে স্বামীকে হারিয়ে লাভলী আক্তার বলেন,স্বামী ইসমাইলকে হারিয়েছি অভাব অনটনে কাটছে আমাদের জীবন । পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছি ভয়াল সিডারে। ছেলে সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সিডরের ভয়াবহ রাত্রির কথা এখনো ভুলতে পারিনি।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খান বলেন, এই ঝড় কেড়ে নিয়েছে পাথরঘাটার মানুষের সম্বল। কেড়ে নিয়েছে আপনজনদের। তাই এ ক্ষতি অপূরণীয়। সরকারি ও সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করলে উপকূলবাসী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। একইসঙ্গে পরবর্তী ভয়াবহতার হাত থেকেও রক্ষা পাবে। সিডরে ৯১ জেলের সহ এখন পর্যন্ত পাথরঘাটার ১৮৮ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে। তাদের জিআর চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটা আমরা কিছুদিন পর বিতরণ করব। সিডারে ৩৪৯ জন নিহত হয়েছে তাদের আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করে বিভিন্ন নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে তাদের সামনের চলার পথটা যেন সহজ হয়ে যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।
এইচএ