'আমার স্বামী প্রত্যেক শুক্রবার নামাজ পড়তে গিয়ে ফিরে এসেছেন। তবে সেদিন ফিরেছেন লাশ হয়ে। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার কোন আয় নেই, আমি এই তিন শিশুসন্তান নিয়ে এখন কোথায় যাব। কি করব কিছু বুঝতে পারছি না। ছোট মেয়েটা এখনো দুধ খায়। গত কয়দিন ধরে সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি।' কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রামপুরা একরামুন নেছা ডিগ্রি কলেজ এলাকার উলান সড়কে জুম্মা নামাজ পড়ে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আমীর হোসেন (২৮) এর স্ত্রী আন্নী আক্তার।
নিহত আমীর হোসেন বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের মৌ-পাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ তালুকদার ও খোদেজান বেগমের ছেলে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন আমীর। ঢাকার রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। তাঁর আরমান (৬), আরিয়ান (৪) ও আমেনা (১) নামের ৩টি সন্তান রয়েছে।
জানা যায়, প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই আমীরের বাবা বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান। এর পরই অভাব-অনটনের কারণে ছোটবেলায় কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যান। সেখানে ২০১৬ সালে মুন্সিগঞ্জের মেয়ে আন্নি আক্তারকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় দুই ছেলে ও এক মেয়ে। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে জুমার নামাজ আদায় করতে রামপুরা মোল্লা টাওয়ার সংলগ্ন মসজিদে যান আমির। নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। সে সময় আন্দোলনকারী ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল। এ সময় তিনটি গুলি এসে তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।
নিহত আমীর হোসেনের স্ত্রী আন্নী আক্তার আরও বলেন, আমার সংসারটা শেষ হয়ে গেছে। স্বামীর আয় দিয়ে সংসার চলত। এখন আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তিন সন্তান নিয়ে কষ্টে আছি। কে আমার সন্তানদের দেখবে.? আমার সন্তানদের ভবিষ্যত কি হবে.? এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা পড়েছি।
আন্নী আক্তারের মা নুরজাহান বেগম বলেন, 'আমার জামাই এভাবে অকালে চলে গেল। তিনটা বাচ্চা নিয়ে মেয়েটা গত তিন মাস ধরে আমার বাড়িতে আছে। এই বাচ্চাগুলো নিয়ে বাকি জীবন কিভাবে চালাবে?'
নিহত আমীর হোসেনের মা খোদেজান বেগম বলেন, 'আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। সে পথচারী ছিল। সে কোনো দল করতো না। যারা আমার মতো আরও মায়ের বুক খলি করেছে তাদের আমি বিচার চাই।'
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী আন্নী।
এইচএ