এইমাত্র
  • রাতে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
  • হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পকে স্বাগত জানালেন বাইডেন
  • বেরোবির বহিষ্কৃত ৭১ শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ
  • কোটা ইস্যুতে আবারও আন্দোলনে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা
  • ভবিষ্যতে 'সুগার মাম্মি' হতে চান অভিনেত্রী হুমায়রা সুবাহ
  • কোটা ইস্যুতে আবারো উত্তাল চট্টগ্রাম
  • উল্লাপাড়ায় আয়া ও নৈশ প্রহরী দিয়েই চলছে মাদ্রাসার ক্লাস
  • কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে সন্ত্রাসী হামলায় পাঁচজন গুরুতর আহত
  • সিরাজগঞ্জে নিখোঁজের ৩ দিন পর নদীতে মিলল মাদরাসা ছাত্রের মরদেহ
  • যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া শহিদুল ১৭ বছর পর গ্রেফতার
  • আজ সোমবার, ৭ মাঘ, ১৪৩১ | ২০ জানুয়ারি, ২০২৫
    দেশজুড়ে

    সংস্কারে কর্তৃপক্ষের নেই উদ্যোগ

    ১৫ বছর ধরে দুই উপজেলার মানুষের গলার কাটা ব্রিজটি

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম
    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম

    ১৫ বছর ধরে দুই উপজেলার মানুষের গলার কাটা ব্রিজটি

    আরিফ হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৪ পিএম

    দীর্ঘ এক যুগের বেশি ধরে দুই উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষের গলার কাটা হিসেবে পরিচিত এই ব্রিজটি। শুধু তাই নয় ভাঙ্গা ব্রিজটির কারণে মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে। গত এক মাসে ব্রিজটিতে ঘটেছে কয়েকটি দুর্ঘটনা। এছাড়াও ছোট বড় দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের সঙ্গি হিসেবে রয়েছে। ব্রিজটির জরাজীর্ণ অবস্থা থাকলেও বছরের পর বছর পার হয় কিন্তু কোন সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। ফলে আশপাশের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী এই ব্রিজটি এখন অতি জরুরী পুনঃনির্মাণের দাবি সুবিধাভোগীদের।

    স্থানীয় সংবাদকর্মী আরিফ হাওলাদার জানিয়েছেন, বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের বাটনা গ্রাম ও বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ধুমচর এলাকার সঙ্গে সড়কপথের সংযোগ ঘটিয়েছে ব্রিজটি। স্থানীয়ভাবে যেটি ধুমচর ব্রিজ হিসেবেই পরিচিত। তবে দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে এখন ব্রিজটি থেকে আমাদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায়ই ব্রিজটি থেকে যানবাহন নিচে পড়ে যাওয়াসহ নানানভাবে দুর্ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে এমন অবস্থা, যানবাহন তো দূরের কথা; ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটেও ব্রিজটি পার হতে চায় না প্রতিনিয়ত। এই ব্রিজটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজারের মত শিক্ষার্থী স্কুল কলেজে যাওয়া আসা করে থাকে। তিনি আরো বলেন, শুধু শিক্ষার্থী নয় আমার মত চাকুরীজীবি থেকে শুরু করে কৃষক, ব্যবসায়ীসহ কয়েক হাজার মানুষ একটা ব্রিজের অভাবে এখন ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে।

    বরিশাল বেঙ্গল বিস্কুট কারখানার দিন মজুরী হিসেবে কাজ করা খাদিজা বেগম নামে এক নারী বলেন, র্দীঘ প্রায় ৭-৮ বছর ধরে আমি সকাল-সন্ধ্যা এই ব্রিজ থেকে চলাচল করি। দেখি প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তাই আমরা স্থানীয়রা এটা নাম দিয়েছি মরন ব্রিজ। কারণ এটা আমাদের এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি এটাকে ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হোক।


    জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন বলেন, এ ব্রিজটি হয়ে বাবুগঞ্জ সদর, মীরগঞ্জের মানুষ উলাল বাটনা হয়ে বরিশাল সদরে দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত করে আসছে তিনি। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিজটি জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে সংস্কারের অভাবে ব্রিজটি এখন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে ব্রিজটির দুই পাশসহ মাঝের পাটাতনও দেবে গেছে, রেলিংগুলো পড়ে গেছে, মাঝখানে পলেস্তার খসে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিজটিতে কর্তৃপক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিলেও সংস্কার কিংবা পুনঃনির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের।

    তিনি প্রতিবেদকে আরো বলেন, প্রায় ৮ বছর ধরে দেশে আছি, আর এতদিন ধরেই ব্রিজটির বেহাল দশা দেখে যাচ্ছি। সরকারিভাবে কোন সংস্কার না করায় এটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী, এখন প্রয়োজন নতুন ব্রিজের। আমি বেচে থাকা অবস্থায় মনে হয় দেখে যেতে পারবো।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সাবেক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ব্রিজের এই বেহাল দশা দেখে স্থানীয় এক ইটভাটা মালিক বছর খানেক আগে সংস্কার করেছিলেন। নিচে খুঁটি দেওয়া আর গর্তের ওপর কাঠের পাটাতনের মতো করা হয়েছিল। কিন্তু ‘সর্বাঙ্গে ক্ষত’ ব্রিজটি তাতেও রক্ষা করা যায়নি। এখন এটি দিয়ে না পারলে সাধারণ মানুষও চলাচল করে না। ধুমচর থেকে বরিশাল সদরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে গেলে সড়কপথে মোটরসাইকেলে প্রায় ৪০ মিনিট ঘুরে আসতে হয়। আর শিক্ষার্থীরা পাশের অন্য একটি ব্রিজ হয়ে ১৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত করে।


    এছাড়া আমার মতো আশপাশের কৃষকরাও কম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন না ব্রিজটির কারণে। ব্রিজটিতে ভারী যানবাহন উঠতে না পারায় এখন সবাইকে ঘুরে আসতে হয়, ফলে যানবাহনের ভাড়া বেশি দিতে হয়।

    স্থানীয় বাসিন্দা নাছির বলেন, ব্রিজটির কারণে বছরের পর বছর ধরে বিপাকে আছি। শুধু সাধারণ মানুষ নয় আশপাশের স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী যারা এটি ব্যবহার করেন তাদের অভিভাবকরা থাকেন সন্তানদের নিয়ে উৎকণ্ঠায়। কারণ যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় যে কেউ হতাহত হতে পারেন। গত ১৫ বছর ধরেই এর বেহাল অবস্থা। বর্তমানে রেলিং না থাকায় ব্রিজটির মাঝে বড় বড় গর্ত থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝখানে দেবে গিয়ে বিশাল ফাঁকা হয়ে গেছে। সেখানে কাঠের পাটাতন দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করে। আর এভাবে চলাচল করতে গিয়ে যানবাহন ব্রিজ থেকে খালে পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

    তিনি বলেন, ভারী গাড়ি তো চলাচল করেই না, সাধারণ মানুষও ব্রিজটি হেঁটে পার হতে ভয় পায়। তবে বেশি বিপদ হয় যখন গুরুতর অসুস্থ কিংবা গর্ভবতী নারীদের নিয়ে বরিশাল যেতে হয়। ব্রিজটি দিয়ে বরিশালের মূল শহরের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার হলেও এখন রোগীদের নিয়ে যেতে হয়ে দীর্ঘপথ ঘুরে। এতে অনেকসময় মুমুর্ষু রোগীর পথেই মৃত্যু হয়। আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা চাই, ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের পথ সচল রাখা হোক।

    এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশলী কাজী এমামুল হক আলিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

    তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে ব্রিজটি সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছেন। গত বছর ব্রিজটি পুনঃনির্মাণের কথা শুনলেও এ অবধি বাস্তবে তার কোনো আলামতই দেখা যায়নি।

    সম্পর্কিত:

    সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি

    Loading…