চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ঈদশুভেচ্ছা ব্যানার টাঙানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ ও দুজন ছুরিকাহত। সংঘর্ষের জেরে খুলশী থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত সোয়া আটটার দিকে নগরের খুলশী থানাধীন কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ দুইজন হলেন জিয়াদুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন। তবে ছুরিকাহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল হালিম শাহ আলমের অনুসারী এবং নগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিনের অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কোন্দল চলে আসছে। এই কোন্দলেরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সন্ধ্যায় জিইসি মোড়ে ঈদশুভেচ্ছা ব্যানার টাঙানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। ধীরে ধীরে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে তারা কুসুমবাগ এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে এবং দুই পক্ষই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। এতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন এবং অন্য দুইজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ করে গুলির শব্দে মানুষ দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. জাহাঙ্গীর সময়ের কণ্ঠস্বর-কে বলেন, "জিইসি মোড় এলাকায় ঈদশুভেচ্ছা ব্যানার টাঙানো নিয়ে বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চারজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ এবং দুজন ছুরিকাহত। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।"
এদিকে, সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ স্বাক্ষরিত এক আদেশে খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুজিবুর রহমানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফতাব হোসেনকে খুলশী থানার নতুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এবং নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার কারণেই এ ধরনের সংঘর্ষ বারবার ঘটছে। ঈদশুভেচ্ছা ব্যানার টাঙানোর মতো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এমন সহিংসতা বড় ধরনের রাজনৈতিক দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি বহন করে।
চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিএম