চ্যাম্পিয়নস ট্রফির স্কোয়াডে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের স্কোয়াড ঘোষণার সময় জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানিয়ে দেন, শুধুমাত্র ব্যাটিং দক্ষতার ভিত্তিতে সাকিবকে দলে রাখা সম্ভব হয়নি। বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে তার সেই দিকটি বিবেচনার সুযোগও ছিল না। এই নিয়ে বিসিবির প্রতি কোনো অভিযোগ নেই টাইগার অলরাউন্ডারের। তবে সাকিব চেয়েছিলেন, বিসিবি অন্তত তার সাথে যোগাযোগ করুক।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে সারের হয়ে একটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলেন সাকিব। সমারসেটের বিপক্ষে ওই ম্যাচটিতে দুই ইনিংস মিলিয়ে বল হাতে ৯ উইকেট শিকার করেছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। তবে দুই অনফিল্ড আম্পায়ার সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ও ভারতে দুই দফা পরীক্ষা দিয়েও সাকিব তার অ্যাকশন বৈধ প্রমাণ করতে পারেননি। যার ফলে তার বোলিং নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে চেন্নাইয়ে বোলিং অ্যাকশনের দ্বিতীয় পরীক্ষার আগে সাকিব তার শৈশবের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ চেয়েছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হত্যা মামলায় নাম জড়ানোয় দেশে ফেরার ঝুঁকিও ছিল তার। এজন্য তিনি বিসিবিকে ভারতে বা পাকিস্তানে একটি ক্যাম্পের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। সাকিবের বিশ্বাস ছিল, সালাউদ্দিনের অধীনে কাজ করার সুযোগ পেলে তিনি পরীক্ষায় সফল হতে পারবেন।
এমনকি সাকিব বিসিবিকে বলেছিলেন, সালাউদ্দিনের সঙ্গে অনুশীলনের পরও যদি তিনি ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হোক—এতে তার আপত্তি থাকবে না। কিন্তু তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি ফারুক আহমেদের বোর্ড। তাতে গুরু সালাহউদ্দিনের অধীনে অনুশীলনের সুযোগও হয়নি সাকিবের। পরবর্তীতে সাকিব ইংল্যান্ডে গিয়ে সারের প্রধান কোচ গ্যারেথ ব্যাটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেন এবং তৃতীয় পরীক্ষায় সফল হন।
যেহেতু চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল থেকে তাকে বাদ দেওয়ার কারণ ছিল বোলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা, এখন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার তাকে আসন্ন জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে ফেরানো হবে কি না, তা নির্ভর করছে বিসিবির সিদ্ধান্তের ওপর। এ বিষয়ে সাকিব বলেন, তিনি অতীত নিয়ে আর ভাবতে চান না, বরং ভবিষ্যতের দিকেই তার নজর। তবে বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ আরও ভালো হলে বিষয়টি সহজ হতো বলে মনে করেন তিনি, 'আমি অভিযোগ করছি না, কিন্তু যোগাযোগ ভালো হলে আমি আরও খুশি হতাম।'
এদিকে বোলিং নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেলেও ফের নতুন বিতর্কে জন্ম দিয়েছেন সাকিব। দেশের আইনে যেকোনো জুয়া বা অনলাইন বেটিং নিষিদ্ধ থাকলেও এবার সাকিব যুক্ত হলেন তেমনই এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এবার অবশ্য পবিত্র রমজানের মাসেই জুয়ার বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়ে খানিকটা রোষের মুখে সাকিব। গতকাল বাংলাদেশে ইফতারের সময়ের ঠিক আগে ‘ওয়ান-এক্সবেট’ নামে পরিচিত এই জুয়ার কোম্পানির বিজ্ঞাপন সাকিবের ফেসবুক পেইজে শেয়ার দেওয়া হয়।
সাকিবের সঙ্গে জুয়ার সম্পৃক্ততা বেশ পুরাতন। বছর দুয়েক আগে বেটিং কোম্পানি ‘বেট উইনার নিউজ’ নামের একটি পোর্টালের শুভেচ্ছাদূত হয়েছিলেন সাকিব। সেবারেও বেশ বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। তখন তিনি ছিলেন জাতীয় দলেরই ক্রিকেটার। এর আগে জুয়াড়ির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গোপন করে ক্রিকেট থেকেই নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। সাকিব এখন বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নন। বাংলাদেশে না থাকার কারণে তার এমন এক বিজ্ঞাপনে কাজ করতে বাধা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে প্রকাশ্যে জুয়া-সম্পর্কিত যেকোনো কার্যক্রম নিষিদ্ধ। যে কারণে স্বাভাবিকভাবেই চলছে নানামুখী বিতর্ক।
এবি