আমরা সবাই জানি যে খাদ্যতালিকায় প্রোটিন যুক্ত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার বা রাতের খাবার যাই হোক না কেন, সব খাবারেই অল্প পরিমাণে প্রোটিন থাকা আবশ্যক। আমরা অনেকেই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ডিম, মাংস, ডাল ইত্যাদির মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করি। নিঃসন্দেহে এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।প্রোটিন গ্রহণ নিয়ে অনেকেই নানা রকম দ্বিধায় থাকেন। কিছু ভুল ধারণাও প্রচলিত রয়েছে। কেউ মনে করেন, শক্তিশালী হতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন খাওয়া জরুরি, আবার কেউ বলেন, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাহলে আদৌ কী পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন?
প্রোটিন কতটুকু প্রয়োজন?
প্রোটিন শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেশী, এনজাইম, ত্বক, চুল ও রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। শরীরে প্রোটিন ভেঙে অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত হয়, যা শরীরের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৭৫ থেকে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন দরকার। অর্থাৎ, ৭০ কেজি ওজনের একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫৬ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। তবে যারা উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রম করেন, যেমন অ্যাথলেট, বডি বিল্ডার বা ওজন প্রশিক্ষণকারী, তাদের জন্য প্রতিদিন ১.৬ থেকে ২.২ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন গ্রহণ করা দরকার।
কোন খাবার থেকে প্রোটিন পাওয়া যায়?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে প্রোটিন গ্রহণ করাই সর্বোত্তম। নিরামিষভোজীদের জন্য ডাল, বাদাম, সয়া, চিয়া সিড, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য ভালো উৎস। আমিষভোজীদের জন্য ডিম, মাছ, মুরগির মাংস ও গরুর মাংস অন্যতম ভালো প্রোটিনের উৎস।
প্রোটিন পাউডারের প্রয়োজনীয়তা ও ঝুঁকি
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের অভাবে বা সঠিক খাদ্য পরিকল্পনার অভাবে অনেকেই পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে প্রোটিন পাউডার হতে পারে একটি সুবিধাজনক বিকল্প। তবে বাজারে পাওয়া অনেক প্রোটিন পাউডারে ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে, যেমন ভারী ধাতু, কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ ও বিষাক্ত রাসায়নিক। ২০১৮ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু প্রোটিন পাউডারে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ২৫ গুণ বেশি বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। তাই ভালো মানের ও পরীক্ষিত প্রোটিন পাউডার কেনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
অতিরিক্ত প্রোটিনের ক্ষতি
অনেকে মনে করেন, যত বেশি প্রোটিন গ্রহণ করবেন, তত দ্রুত পেশী গঠন হবে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। তাছাড়া, বেশি প্রোটিন গ্রহণের ফলে পেট ফাঁপা, গ্যাস ও হজমজনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, দিনে ২০-৪০ গ্রাম প্রোটিন পাউডারের বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ খুব বেশি প্রোটিন পাউডার গ্রহণ করলে প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে পাওয়া ভিটামিন ও খনিজ উপাদান বাদ পড়ে যেতে পারে।
সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা
প্রোটিন গ্রহণের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাছ, শাকসবজি, ফলমূল এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত।
পেশী গঠন ও শক্তিশালী হতে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ, তবে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন নেই। সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম ও সঠিক শারীরিক ব্যায়ামই শক্তিশালী শরীরের মূল চাবিকাঠি।
এবি