যশোরে বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বেড়েই চলেছে। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় এই ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন অসাধুরা। সিভিল সার্জন অফিসের খাতা কলমের বাইরে জেলায় আরও অর্ধশত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে।
নামমাত্র এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবার নামে রীতিমতো মহা প্রতারণা চালানো হচ্ছে। রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে, বিগত দিনে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে বন্ধ হওয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো অনিয়ম সংশোধন না করেই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
সিভিল সার্জন অফিসের সূত্র জানিয়েছে, যশোর জেলায় ৩০৯ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে ক্লিনিক ১২০ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১৮৯। এরমধ্যে ২৬৩ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হালনাগাদ লাইসেন্স নেই। এছাড়া তাদের হিসাবের বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় কিøনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের জন্য আবেদনও করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে।
সূত্রটি আরও জানায়, বিগত দিনে যশোর জেলার অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যশোর শহরের মুজিব সড়কে অবস্থিত পিস হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রোটারি হেলথ সেন্টারের প্যাথলজি ল্যাব, ঘোপ জেল রোডের এমসি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেন্ট্রাল হসপিটালের প্যাথলজি ল্যাব ও ভোলা ট্যাংক রোডের নুরুল ইসলাম ডায়াবেটিক সেন্টার, মণিরামপুর উপজেলার মডার্ন ক্লিনিক, রাজগঞ্জ ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কপোতাক্ষ ক্লিনিক ,পারবাজার সার্জিক্যাল ক্লিনিক, কেসি সার্জিক্যাল এন্ড শিশু প্রাইভেট হসপিটাল, রয়েল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বেনাপোল পৌর শহরে অবস্থিত বেনাপোল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্টার ডায়াগনস্টিক সেন্টার , ঝিকরগাছা উপজেলার ফেমাস মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ছুটিপুর প্রাইভেট ক্লিনিক, আয়েশা মেমোরিয়াল মেডিকেল সেন্টার, মোহাম্মদ আলী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সীমান্ত ডায়াগনস্টিক এন্ড ডায়াবেটিস কেয়ার, ছুটিপুর প্রাইভেট ক্লিনিক, সালেহা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আনিকা ক্লিনিক, চৌগাছা উপজেলার মায়ের দোয়া প্রাইভেট হাসপাতাল, নোভা এইড, বাঘারপাড়া উপজেলার মা জেনারেল হাসপাতাল, হাজি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, খাজা বাবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফাতেমা ক্লিনিক, আনোয়ারা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মরিয়ম ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়ম ও ত্রুটির মধ্যে রোগীর অস্ত্রোপচার, চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হতো। অথচ মানসম্মত যন্ত্রপাতি বা ল্যাব টেকনোলজিস্ট ছিলো না কারো। এছাড়া ভাড়াটিয়া চিকিৎসক দিয়ে অপারেশনের পর চিকিৎসকের আর খোঁজ থাকেনা। যদিও পরে অনিয়ম সংশোধন করে অনেক প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযানে একাধিকবার বন্ধ করেও ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমতি ঠেকানো যাচ্ছে না। কিছু দিন বন্ধ থাকার পর দেনদরবারের মাধ্যমে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কার্যক্রম চালু করা হয়। সিভিল সার্জনের অফিসের তালিকায় না থাকা ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসেবার নামে রীতিমতো মহাপ্রতারণা চালানো হচ্ছে। সরকারি নিয়মনীতি না মেনে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে রোগীদের অস্ত্রোপচার, চিকিৎসাসেবা প্রদান ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম নামমাত্রভাবে করানো হয়। সেখানে গিয়ে রোগীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকা এবং মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে তারা এই সাহস দেখান। এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চলার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন মাসুদ রানা জানান, ঈদের পর সকল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করা হবে। সরকারের নিয়মনীতি না মেনে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ দেয়া হবে না।
এমআর