কালোজিরা আর সজিনা পাতার মিশ্রণে সাইলেজ করে সারাদেশে গো-খাদ্যের নূতন দিগন্ত উন্মোচন করলো ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শামীম হোসেন আলভী। বৃহত্তর ময়মনসিংহে গো-খাদ্যের সংকট সমাধানে প্রথম এ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন শুরু করে সাফিনা সাইলেজ।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের মামুদনগর গ্রামে এ সাইলেজের মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, এই প্রথম দেখলাম সাইলেজে সাজিনা পাতা আর কালোজিরা ব্যবহার করা হয়। যার কারণে এ খাদ্য বাজারের অন্যান্য সাইলেজের চেয়ে গুনগত মান অত্যন্ত ভালো।
তিনি আরও বলেন, সাজিনা পাতা কুষ্ঠ রোগ নিরাময় করে। কৃমির বিস্তার রোধ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গাভীর দুধ উৎপাদন আর ষাঁড়ের মাংসও বাড়ে। আর কালোজিরা তো মহৌষধ। শুধু গরু নয়, মানুষের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। গোখাদ্যে কালোজিরা থাকলে পেটের গ্যাস-বদহজম হয় না। রুচি বাড়ে এবং অন্যান্য রোগবালাই প্রতিরোধেও কালোজিরা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে।
২০২২ সালে উপজেলায় ১৭ একর জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা আবাদ শুরু করেন শামীম হোসেন আলভী। ভুট্টার চারা জমিতে রোপনের ৮০ থেকে ৯০ দিনের মাঝে ভুট্টা গাছ কর্ন সাইলেজ করার উপযোগী হয়ে উঠে। পরে ক্ষেত থেকে ভুট্রা গাছ কেটে খামারেই মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাত করেন ‘সাফিনা সাইলেজ’ নামে।
সেখান থেকে ভুট্টার কর্ণ সাফিনা সাইলেজ প্রতি প্যাকেট খুচরা ৫শ ৫০ টাকা ও পাইকারি ৫শ ২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। অনলাইনেও বিক্রি হয় পশুর সুষম খাদ্য এ সাইলেজ।
গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে সাইলেজের চাহিদা থাকায় ২০২২ সালে প্রথমবার ভুট্টা চাষ করে ছয় মাসের মধ্যেই বিনিয়োগের ১২ লাখ টাকা উঠিয়ে লাভের মুখ দেখেন শামীম হোসেন আলভী।
এ বছর সাইলেজ উৎপাদনের জন্য কৃষক পর্যায়ে ভুট্টা আবাদ করেছেন ৬৮ একর জমিতে। স্থানীয় খামারিদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন তিনি অনলাইনে সারাদেশে সাইলেজ বিক্রি করছেন। তিনি প্রতি মাসে ২০ থেকে ২৫ টন সাইলেজ বিক্রি করে থাকেন।
সাইলেজ গবাদি পশুর দুধ ও মাংস বৃদ্ধি করে তার দেখাদেখি অন্য বেকার যুবক এবং অন্যান্য উদ্যোক্তারা সাইলেজ তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কেন্দুয়ার জান্নাত ডেইরি এন্ড ফ্যাটেনিং এর পরিচালক রোকন বলেন, অনেক উদ্যোক্তা পণ্যের মানের চেয়ে ব্যবসার চিন্তা করে বেশি। তবে সাফিনা সাইলেজ ব্যবসা করার চেয়ে পণ্যের (সাইলেজ) গুণগত মান ভালো রেখেছেন। তার সাইলেজের মান অত্যন্ত ভালো। এটা পশুকে দেয়ার সাথে সাথে দ্রুত খেয়ে শেষ করে ফেলে।
গৌরীপুরে পৌর শহরের খামারি মীম বলেন, বোরো মৌসুমে আমাদের জমিতে ধান চাষ হওয়ায়,মাঠে গরু চড়ানো সম্ভব হয় না এবং ঘাসের সংকট দেখা দেয়। এ সময় পশুর সুষম খাদ্য হিসেবে শামীম ভাইয়ের খামার থেকে আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে সাইলেজ ক্রয় করে থাকি।
উদ্যোক্তা আলভী বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বড় বড় পশু খামারিরা অনলাইনে অর্ডার করলে পৌঁছে দিয়ে আসি আবার অনেকেই খামারে এসে আমার সাইলেজ ক্রয় করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, সাফিনা সাইলেজের প্যাকেটকৃত গো-খাদ্যের মেয়াদ ২বছর ৬মাস। এর একদিন আগেও নষ্ট হয়ে গেলে কোম্পানী বদল করে দিবে।
এমআর